পাতা:রাজসিংহ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রসিকা বলিল, “যদি আসলটার এই দশা, তবে নকলটা ঘরের কড়ি কিছু দিয়া আমাদিগকে দিয়া যাও |”

আবার একটা হাসির গোল পড়িয়া গেল। প্রাচীনা বিরক্ত হইয়া চিত্রগুলি ঢাকিল। বলিল, “হাসিতে মা, তসবির কেনা যায় না। রাজকুমারী আসুন, তবে আমি তসবির দেখাইব। আর তাঁরই জন্য এ সকল আনিয়াছি |”

তখন সাত জন সাত দিক হইতে বলিল, “ওগো আমি রাজকুমারী। ও আয়ি বুড়ী, আমি রাজকুমারী |” বৃদ্ধা ফাঁপরে পড়িয়া চারিদিকে চাহিতে লাগিল, আবার আর একটা হাসির গোল পড়িয়া গেল।

অকস্মাৎ হাসির ধুম কম পড়িয়া গেল–গোলমাল একটু থামিল–কেবল তাকাতাকি, আঁচাআঁচি এবং বৃষ্টির পর মন্দ বিদ্যুতের মত ওষ্ঠপ্রান্তে একটু ভাঙ্গা হাসি। চিত্রস্বামিনী ইহার কারণ সন্ধান করিবার জন্য পশ্চাৎ ফিরিয়া দেখিলেন, তাঁহার পিছনে কে একখানি দেবীপ্রতিমা দাঁড় করাইয়া গিয়াছে।

বৃদ্ধা অনিমেষলোচনে সেই সর্‍বশোভাময়ী ধবলপ্রস্তরনির্‍মিতপ্রায় প্রতিমা পানে চাহিয়া রহিল–কি সুন্দর! বুড়ী বয়োদোষে একটু চোখে খাট, তত পরিষ্কার দেখিতে পায় না–তাহা না হইলে দেখিতে পাইত যে, এ ত প্রস্তরের বর্ণ নহে; নির্‍জীবের এমন সুন্দর বর্ণ হয় না। পাথর দূরে থাকুক, কুসুমেও এ চারুবর্‍ণ পাওয়া যায় না। দেখিতে দেখিতে বৃদ্ধা দেখিল যে, প্রতিমা মৃদু মৃদু হাসিতেছে। পুতুল কি হাসে! বুড়ী তখন মনে মনে ভাবিতে লাগিল, এ বুঝি