পাতা:রাজসিংহ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রথম পরিচ্ছেদ

 রসিকা বলিল, “যদি আসলটার এই দশা, তবে নকলটা ঘরের কড়ি কিছু দিয়া আমাদিগকে দিয়া যাও!”

 আবার একটা হাসির গোল পড়িয়া গেল। প্রাচীনা বিরক্ত হইয়া চিত্রগুলি ঢাকিল। বলিল, ‘হাসিতে মা তসবীর কেনা যায় না। রাজকুমারী আসুন তবে আমি তসবীর দেখাইব। আজ তাঁরই জন্য এ সকল আনিয়াছি।”

 তখন সাতজন সাত দিক্‌ হইতে বলিল, “ওগো আমি রাজকুমারী! ও আয়ি বুড়ী আমি রাজকুমারী।” বৃদ্ধা ফাঁপরে পড়িয়া চারিদিকে চাহিতে লাগিল, আবার আর একটা হাসির গোল পড়িয়া গেল।

 অকস্মাৎ হাসির ধূম কম পড়িয়া গেল— গোলমাল একটু থামিল—কেবল তাকাতাকি আঁচাআঁচি, এবং বৃষ্টির পর মন্দ বিদ্যুতের মত ওষ্ঠপ্রান্তে একটু ভাঙ্গা হাসি। চিত্রস্বামিনী ইহার কারণ সন্ধান করিবার জন্য পশ্চাৎ ফিরিয়া দেখিলেন তাঁহার পিছনে কে একখানি দেবীপ্রতিমা দাঁড় করাইয়া গিয়াছে!

 বৃদ্ধা অনিমিক্‌ লোচনে সেই সর্ব্বশোভাময়ী ধবল প্রস্তর-নির্ম্মিতা প্রতিমা পানে চাহিয়া রহিল—কি সুন্দর! বুড়ী বয়সদোষে একটু চোখে খাট, তত পরিষ্কার দেখিতে পায় না—ডাহা না হইলে দেখিতে পাইত যে, এ শ্বেতপ্রস্তরের বর্ণ নহে; সাদা পাতর এত গোলাবি আভা মারে না। পাতর দূরে থাকুক কুসুমেও এ চারুবর্ণ পাওয়া যায় না। দেখিতে দেখিতে বৃদ্ধা দেখিল যে প্রতিমা মৃদু মৃদু হাসিতেছে। ও মা—পুতুল কি হাসে। বুড়ী তখন মনে মনে ভাবিতে লাগিল এ বুঝি