মৃত্তিকাগর্ভ হইতে সেই মৃতদেহটী আমরা সবিশেষ সতর্কতার সহিত উঠাইলাম; দেহ হইতে গলিত মাংস স্খলিত হইতে দিলাম না। সেই দেহ গলিত অবস্থা ধারণ করিয়াছিল সত্য; কিন্তু তাহার পরিধানে যে সকল বস্ত্রাদি ছিল, তাহার একখানিও কোনরূপে নষ্ট হইয়াছিল না।
সেই স্থান হইতে মৃতদেহ বাহির করিবার পর, কালীবাবু ও ত্রৈলোক্যের অবস্থা যে কিরূপ ধারণ করিয়াছিল, তাহার যথাযথ বর্ণনার ক্ষমতা আমার নাই। উহাদিগকে দেখিয়া, সেই সময় সহজে অনুমান করা কঠিন হইল যে, উহারা জীবিত কি মৃত। দশ বিশ ডাকের কম উহাদিগের মুখ হইতে প্রায়ই বাক্য উচ্চারিত হইল না, সহজে কোন কথার উত্তর আর একবারেই পাইলাম না। আমাদিগের প্রশ্নের উত্তরে কেবল উহারা বলিতে লাগিল যে, আমরা ইহার কিছুই অবগত নহি। সেই সময়ে আমাদিগের মধ্যে কোন কোন কর্ম্মচারী ত্রৈলোক্যকেই রাণীজি বলিয়া সম্বোধন করিতে লাগিল; কিন্ত ত্রৈলোক্য সেই সকল কথায় কোনরূপ উত্তর প্রদান করিল না।
সেই মৃতদেহ বাহির করিবার পরই একজন কর্ম্মচারীকে বড়বাজারে পাঠাইয়া দেওয়া হইল। অতি অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি রামজীলালের মনিব এবং তাঁহার দোকানের আর কয়েকজন কর্ম্মচারীর সঙ্গে প্রত্যাবর্ত্তন করিলেন। মৃতদেহ দেখিয়া তাঁহারা রামজীলালের দেহ বলিয়া কোনরূপেই চিনিতে পারিলেন না; কিন্তু তাঁহার পরিহিত বস্ত্রাদি দেখিয়া তাঁহাদিগের আর চিনিতে বাকী থাকিল না। সকলেই একবাক্যে বলিয়া উঠিলেন, ‘এই মৃতদেহ রামজীলালের।’