পাতা:রাধারাণী-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

蜘 ब्रअनौ লবঙ্গ হাসিয়া বলিল, “আমার মুখপানে চাহিয়া কি দেখিতেছ ? তোমার অর্জিত ঐশ্বৰ্য্য কাড়িয়া লইতে আসিয়াছি কি না ? মনে করিলে তাহ পারি।” আমি বলিলাম, “তুমি সব পার, কিন্তু ঐটি পার না। পারিলে কখন রজনীকে বিষয় দিয়া, এখন স্বহস্তে রাধিয়া সতীনকে খাওয়াইবার বন্দোবস্ত করিতে না ।” লবঙ্গ উচ্চ হাসি হাসিয়া বলিল, “ওটা বুঝি বড় গায়ে লাগিবে মনে করেছ? সতীনকে রাধিয়া দিতে হয়, বড় দুঃখের কথা বটে ; কিন্তু একটা পাহারাওয়ালাকে ডাকিয়া তোমাকে ধরাইয়া দিলে, এখনই আবার পাচটা রাধুনী রাখিতে পারি।” অামি বলিলাম, “বিষয় রজনীর ; আমাকে ধরাইয়া দিলে কি হইবে ? যাহার বিষয়, সে ভোগ করিতে থাকিবে ।” লবঙ্গ । তুমি কস্মিন কালে স্ত্রীলোক চিনিলে না। যাহাকে ভালবাসে, তাহাকে রক্ষার জন্য রজনী এখনই বিষয় ছাড়িয়া দিবে। আমি। অর্থাৎ আমার রক্ষার জন্য বিষয়টা তোমায় ঘুষ দিবে। লবঙ্গ । তাই । আমি । তবে এতদিন সে ঘুৰ্য চাও নাই, আমাদিগের বিবাহ হয় নাই বলিয়া । বিবাহ হইলেই সে ঘুষ চাহিবে। লবঙ্গ। তোমার মত ছোটলোকে বুঝিবে কি প্রকারে ? চোরের বুঝিতে পারে না যে, পরের দ্রব্য অস্পৃশ্ব । রজনীর সম্পত্তি রাখিতে পারিলেও আমি রাখিব কেন ? আমি বলিলাম, “তুমি যদি এমন না হবে, তবে আমার সে মরণকুবুদ্ধি ঘটিবে কেন ? যদি আমার এত অপরাধ মার্জন করিয়tছ, এত অনুগ্রহ করিয়াছ, তবে অার একটি ভিক্ষা আছে । যাহা জান, তাহা যদি অন্তের কাছে না বলিয়াছ, তবে রজনীর কাছেও বলিও না ।” দর্পিত লবঙ্গলতী ভ্রভঙ্গী করিল—কি সুন্দর ভ্রভঙ্গী ! বলিল, “আমি কি ঠক । যে তোমার স্ত্রী হইবে, তাহার কাছে তোমার নামে ঠকাম করিবার জন্য কি আমি তাহার বাড়ীতে আসিয়াছি ?” - এই বলিয়া লবঙ্গলতী হাসিল। তাহার হাসির মৰ্ম্ম আমি কিছু কখন বুঝিতে পারি না। লবঙ্গ বিলক্ষণ রাগিয়া উঠিয়াছিল--কিন্তু হাসিতে সব রাগ ভাসিয়া গেল । যেন জলের উপর হইতে মেঘের ছায়া সরিয়া গেল, তাহার উপর মেঘমুক্ত চন্দ্রের ন্যায় জলিতে লাগিল। আমি লবঙ্গলতার মৰ্ম্ম কখন বুঝিতে পারিলাম না। হাসিয়া লবঙ্গ বলিল, “তবে আমি রজনীর কাছে যাই ।”