পাতা:রাধারাণী-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

করিতেছিলাম। সমস্ত দিবস অধ্যয়ন করিয়াছিলাম। জগতের ছকছ গুঢ় তত্ত্বসকলের আলোচনা করিতেছিলাম। কিছুরই মৰ্ম্ম বুঝিতে পারি না, কিন্তু কিছুতেই আকাক্তক্ষ নিবৃত্তি পায় না। যত পড়ি, তত পড়িতে সাধ করে। শেষ শাস্তি বোধ হইল। পুস্তক বন্ধ করিয়া হস্তে লইয়া, চিন্তা করিতে লাগিলাম। একটু নিজা আসিল—অথচ নিদ্রা নহে। সে মোহ, ফ্রি স্থা স্বর বা তৃপ্তিল হে। ক্লান্ত হস্ত হইতে পুস্তক খসিয়া পড়িল। চক্ষু চাহিয়া আছি—বাহ বস্তু সকলই দেখিতে পাইতেছি, কিন্তু কি দেখিতেছি, তাহ বলিতে পারি না। অকস্মাৎ সেইখানে প্রভাতবীচিবিক্ষেপচপল কলকলনদিনী নদী বিস্তৃত৷ দেখিলাম—যেন তথা উষার উজ্জল বর্ণে পুৰ্ব্বদিক প্রভাসিত হইতেছে—দেখি, সেই গঙ্গাপ্রবাহমধ্যে সৈকতমূলে রজনী। রজনী জলে নামিতেছে। ধীরে ধীরে ধীরে! অন্ধ ! অথচ কুঞ্চিত ভ্র ; বিকল, অথচ স্থির ; সেই প্রভাতশাস্তিগীতলা ভাগীরথীর ন্যায় গম্ভীর, ধীর, সেই ভাগীরথীর হ্যায় অস্তরে দুর্জয় বেগশালিনী! ধীরে, ধীরে, ধীরে,—জলে নামিতেছে। দেখিলাম, কি সুন্দর। রজনী কি মুন্দরী । বৃক্ষ হইতে নবমুঞ্জরীর সুগন্ধের স্বায়, দূরশ্ৰত সঙ্গীতের শেষভাগের ন্যায়, রজনী জলে, ধীরে—ধীরে—ধীরে নামিতেছে। ধীরে রজনি ! ধীরে ! আমি দেখি তোমায় । তখন অনাদর করিয়া দেখি নাই, এখন একবার ভাল করিয়া দেখিয়া লই। ধীরে রজনি, ধীরে । আমার মৃচ্ছা হইল। মূৰ্ছার লক্ষণ সকল আমি অবগত নহি। যাহা পশ্চাৎ শুনিয়াছি, তাহা বলিয়া কোন ফল নাই। আমি যখন পুনর্বার চেতনাপ্রাপ্ত হইলাম, তখন রাত্রিকাল—আমার নিকট অনেক লোক। কিন্তু আমি সে সকল কিছুই দেখিলাম না । আমি দেখিলাম—কেবল সেই মৃদুনাদিনী গঙ্গা, আর সেই মৃতুগামিনী রজনী, ধীরে ধীরে, ধীরে জলে নামিতেছে। চক্ষু মুদিলাম, তবু দেখিলাম সেই গঙ্গা, আর সেই রজনী। আবার চাহিলাম, আবার দেখিলাম সেই গঙ্গা আর সেই রজনী। দিগন্তরে চাহিলাম—আবার সেই রজনী, ধীরে, ধীরে, ধীরে জলে নামিতেছে। উদ্ধে চাহিলাম—উদ্ধেও আকাশবিহারিণী গঙ্গা ধীরে, ধীরে, ধীরে বহিতেছে ; আর আকাশবিহারিণী রজনী ধীরে, ধীরে, ধীরে নামিতেছে। অন্য দিকে মন ফিরাইলাম ; তথাপি সেই গঙ্গা আর সেই রজনী। আমি নিরস্ত হইলাম। চিকিৎসকেরা আমার চিকিৎসা করিতে লাগিল । অনেক দিন ধরিয়া আমার এই চিকিৎসা হইতে লাগিল, কিন্তু আমার নয়নাগ্র হইতে রজনীরূপ তিলেক জন্য অস্তৰ্হিত হইল না। আমি জানি না, আমার কি রোগ বলিয়া

a ●