পাতা:রাধারাণী-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

噶, ૧૭ রজনী অতএব প্রকৃত তত্ত্ব জানিবার জন্ত শচীন্দ্রের কাছে গিয়া বসিলাম । এ কথা ও কথার পর রজনীর প্রসঙ্গ ছলে পাড়িলাম। আর কেহ সেখানে ছিল না। রজনীর নাম শুনিবামাত্র । বাছ অমনি, চমকিত হংসীর স্যায় গ্রীবী তুলিয়া আমার মুখ প্রতি চাহিয়া রহিল। আমি যত রজনীর কথা বলিতে লাগিলাম, শচীন্দ্র কিছুই উত্তর করিল না, কিন্তু ব্যাকুলিত চক্ষে আমার প্রতি চাহিয়া রহিল। ছেলে বড় অস্থির হইয়া উঠিল—এটা পাড়ে, সেটা ভাঙ্গে, এইরূপ আরম্ভ করিল। আমি পরিশেষে রজনীকে তিরস্কার করিতে লাগিলাম ; সে অত্যন্তু ধনলুন্ধা, আমাদিগের পূর্বকৃত উপকার কিছুমাত্র স্মরণ করিল না। এইরূপ কথাবার্তা শুনিয়া শচীন্দ্র অপ্রসন্ন ভাবাপন্ন হইলেন, এমন আমার বোধ হইল, কিন্তু কথায় কিছু প্রকাশ পাইল না। নিশ্চয় বুঝিলাম, এটি সন্ন্যাসীর কীৰ্ত্তি। তিনি এক্ষণে স্থানান্তরে গিয়াছিলেন, অল্পদিনে আসিবার কথা ছিল । তাহার প্রতীক্ষা করিতে লাগিলাম। কিন্তু তাহাও মনে ভাবিতে লাগিলাম যে, তিনিই বা কি করিবেন ? আমি নিৰ্ব্বোধ দুরাকাঙ্ক্ষাপরবশ স্ত্রীলোক —ধনের লোভে অগ্র পশ্চাৎ না ভাবিয়া আপনিই এই বিপত্তি উপস্থিত করিয়াছি । তখন মনে জানিতাম যে, রজনীকে নিশ্চয়ই পুত্রবধূ করিব। তখন কে জানে যে, কাণ ফুলওয়ালীও তুর্লভ হইবে ? কে জানে যে, সন্ন্যাসীর মন্ত্রেীষধে হিতে বিপরীত হইবে ? স্ত্রীলোকের বুদ্ধি অতি ক্ষুদ্র, তাহ জানিতাম না ; আপনার বুদ্ধির অহঙ্কারে আপনি মজিলাম। আমার এমন বুদ্ধি হইবার আগে, আমি মরিলাম না কেন ? এখন ইচ্ছা হইতেছে মরি, কিন্তু শচীন্দ্রবাবুর আরোগ্য না দেখিয়া মরিতে পারিতেছি না। কিছু দিন পরে কোথা হইতে সেই পূৰ্ব্বপরিচিত সন্ন্যাসী আসিয়া উপস্থিত হইলেন। তিনি বলিলেন, তিনি শচীন্দ্রের পীড়া শুনিয়া দেখিতে আসিয়াছেন। কে র্তাহাকে শচীন্দ্রের পড়ার সংবাদ দিল, তাহ কিছু বলিলেন না। শচীন্দ্রের পীড়ার বৃত্তান্ত আছোপান্ত শুনিলেন। পরে শচীন্দ্রের কাছে বসিয়া নানাপ্রকার কথোপকথন করিতে লাগিলেন। তৎপরে প্রণাম করিবার জন্য আমি তাহাকে ডাকিয়া পাঠাইলাম। প্রণাম করিয়া, মঙ্গল জিজ্ঞাসার পর বলিলাম, “মহাশয় সৰ্ব্বজ্ঞ ; না জানেন, এমন তত্ত্বই নাই। শচীন্দ্রের কি রোগ, আপনি অবশ্ব জানেন ।” তিনি বলিলেন, “উহা বায়ুরোগ। অতি দুশ্চিকিৎস্য ।” আমি বলিলাম, “তবে শচীন্দ্র সর্বদা রজনীর নাম করে কেন ?” - সন্ন্যাসী বলিলেন, “তুমি বালিকা, বুঝিবে কি ?” (কি সৰ্ব্বনাশ, আমি বালিকা। আমি শচীর মা ! ) “এই রোগের এক গতি এই যে, হৃদয়স্থ লুক্কায়িত এবং অপরিচিত ভাব