পাতা:রাধারাণী-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পড়ে কেন? এই কি সেই ! আমি মুর্থ। কোথায় সেই দীনচুঃখিনী, কুটারবাসিনী ভিখারিণী—আর কোথায় এই উচ্চপ্রাসাদবিহারিণী ইন্দ্রাণী ! আমি সে রাধারাণীকে অন্ধকারে ভাল করিয়া দেখিতে পাই নাই, সুতরাং জানি না যে, সে সুন্দরী, কি কুৎসিত, কিন্তু এই শচীনিন্দিত রূপলীর শতাংশের একাংশ রূপও যদি তাহার থাকে, তাহ হইলে লেও লোকমনোমোহিনী বটে ! এ দিকে রাধারাণী, অতৃপ্তশ্রবণে রুক্মিণীকুমারের মধুর বচনগুলি শুনিতেছিলেন– মনে মনে ভাবিতেছিলেন, তুমি যাহা পাপিষ্ঠ। রাধারাণীকে বলিতেছ, কেবল তোমাকেই সেই কথাগুলি বলা যায় ! তুমি আজ আট বৎসরের পর রাধারাণীকে ছলিবার জন্য কোন নন্দনকানন ছাড়িয়া পৃথিবীতে নামিলে ? এত দিনে কি আমার হৃদয়ের পূজায় প্রীত হইয়াছ ? তুমি কি অম্ভর্যামী নহিলে আমি লুকাইয়া লুকাইয়া, হৃদয়ের ভিতরে লুকাইয়৷ তোমাকে যে পূজা করি, তাহা তুমি কি প্রকারে জানিলে ? *

  • এই প্রথম, দুই জনে স্পষ্ট দিবসালোকে, পরস্পরের প্রতি দৃষ্টিপাত করিলেন। দুই জনে, জুই জনের মুখপানে চাহিয়া ভাবিতে লাগিলেন, আর এমন আছে কি ? এই সসাগর, নদনদীচিত্রিত, জীবসন্ধুলা পৃথিবীতলে এমন তেজোময়, এমন মধুর, এমন সুখময়, এমন চঞ্চল অথচ স্থির, এমন সহাস্য অথচ গম্ভীর, এমন প্রফুল্ল অথচ স্ত্রীড়াময়, এমন আর আছে কি ? চিরপরিচিত অথচ অত্যন্ত অভিনব, মুহূর্তে মুহূর্তে অভিনব মধুরিমাময়, আত্মীয় অথচ অত্যন্ত পর, চিরস্থত অথচ অদৃষ্টপূর্ব—কখন দেখি নাই, আর এমন দেখিব না, এমন আর আছে কি ?

রাধারাণী বলিল,—বড় কষ্টে বলিতে হইল, কেন না, চক্ষের জল থামে না, আবার সেই চক্ষের জলের উপর কোথা হইতে পোড়া হাসি আসিয় পড়ে—রাধারাণী বলিল, “ত, আপনি এতক্ষণ কেবল সেই ভিখারিণীর কথাই বলিলেন, আমাকে যে কেন দর্শন দিয়াছেন, তা ত এখনও বলেন নাই ।” - +. ই গা, এমন করিয়া কি কথা কহা যায় গা ? যাহার গলা ধরিয়া কাদিতে ইচ্ছা করিতেছে, প্ৰাণেশ্বর ! তুঃখিনীর সর্বস্ব । চিরবাঞ্ছিত । বলিয়া যাহাকে ডাকিতে ইচ্ছ। করিতেছে ; আবার যাকে সেই সঙ্গে “হ গা, সেই রাধারাণী পোড়ারমুখী তোমার কে হয় গা" বলিয়৷ তামাসা করিতে ইচ্ছা করিতেছে—তার সঙ্গে আপনি, মশাই, দর্শন দিয়াছেন, এই সকল কথা নিয়ে কি কথা কহ যায়.গ ? তোমরা পাঁচ জন রসিক, প্রেমিক,