পাতা:রাধারাণী-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভূমিকা বঙ্কিমচন্দ্র ৰ্তাহার সমস্ত উপন্যাসে যে রীতি অবলম্বন করিয়াছেন, ‘ইন্দিরা এবং রজনী'তে তাহার ব্যতিক্রম দৃষ্ট হয় ; সৰ্ব্বত্র উপন্যাসকার গল্প বলিয়াছেন, ইন্দিরায় ইন্দিরাই বক্তা; রজনী'তে বিভিন্ন চরিত্র নিজেরাই আপন আপন বক্তব্য বলিয়া গল্পের ধারা বজায় রাখিয়াছেন। উইস্কি কলিন্সের Woman in White-এ অবলম্বিত পদ্ধতি যে বঙ্কিমচন্দ্র গ্রহণ করিয়াছেন, তাহ “বিজ্ঞাপনে” স্বীকার করিয়াছেন। র্তাহার নায়িকাও Wé foôt& Last Days of Pompeēš-loig qq ফুলওয়ালী নিদিয়ার স্মরণে চিত্রিত হইয়াছে। বঙ্কিমচন্দ্র স্বয়ং বলিয়াছেন, উপন্যাসে বর্ণিত “অনৈসর্গিক বা অপ্রাকৃত ব্যাপার”গুলির দায়িত্ব তিনি এই পদ্ধতির সাহায্যে কাটাইতে চাহিয়াছেন। লেখকের দায়িত্ব কাটিলেও শিল্পস্থষ্টি-হিসাবে উপন্যাসের ক্ষতি হইয়াছে। খ্ৰীযুক্ত ঐকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় (‘বঙ্গসাহিত্যে উপন্যাসের ধারা, পৃ. ১৫৫-১৬২) এবং ঐযুক্ত অক্ষয়কুমার দত্তগুপ্ত (বঙ্কিমচন্দ্র', পৃ. ২৬০-২৬৫) ইহা লইয়া বিস্তৃত আলোচনা করিয়াছেন। কিন্তু সকল অসঙ্গতি ও অভাব সত্ত্বেও বাংলা উপন্যাস-সাহিত্যের ইতিহাসে রজনী'র বিশিষ্ট স্থান থাকিবে; ইহাই বাংলা ভাষায় সৰ্ব্বপ্রথম মনস্তত্ববিশ্লেষণমূলক উপন্যাস। ‘ইন্দিরাও তাই, কিন্তু প্রথম সংস্করণ ইন্দির। রজনী'র পূৰ্ব্বগামী হইলেও ৪৫ পৃষ্ঠার একটি ক্ষুদ্র গল্প মাত্র ছিল; ১৮৯৩ খ্ৰীষ্টাব্দে ৫ম সংস্করণে তাহ রীতিমত উপন্যাস-গৌরব পাইয়াছে। নায়ক-নায়িকার মানসিক দ্বন্দ্ব এবং চিন্তার ঘাত-প্রতিঘাতকে রজনী'তে ঘটনা-বৈচিত্র্যের উপরেও প্রাধান্ত দেওয়া হইয়াছে। সে যুগের বর্ণনাবহুল রোমাটিক উপন্যাসের ক্ষেত্রে ইহা অভিনব, সন্দেহ নাই। শ্ৰীযুক্ত শচীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখিয়াছেন, হীরালাল-চরিত্র সে যুগের এক জন খবরের কাগজের সম্পাদককে আদর্শ করিয়া রচিত। রজনী' সম্বন্ধে ইহার অধিক কোনও সংবাদ পাওয়া যায় না । বঙ্কিমচন্দ্রের জীবিতকালে রজনী'র তিনটি সংস্করণ হয় ; প্রথম—১২৮৪, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ১২৮৭ । ১৯২৮ খ্ৰীষ্টাব্দে (ডিসেম্বর) কলিকাতা হইতে পি. মজুমদার ইহার ইংরেজী অনুবাদ প্রকাশ করেন। ১৮৯৬ খ্ৰীষ্টাব্দে বোম্বাই হইতে এন. হেমচন্দ্র ইহার গুজরাট অনুবাদ প্রকাশ করিয়াছিলেন।