পাতা:রাধারাণী-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রথম খণ্ড ; যষ্ঠ পরিচ্ছেদ 는 আমি বলিলাম, “শুন, এ বিবাহে তুমি যেমন বিরক্ত, আমিও তেমনি। আমার এ বিবাহ যাহাতে না হয়, আমি তাহাই করিতে রাজি আছি। কিসে বিবাহ বন্ধ হয়, তাহার উপায় বলিতে পার ?” চাপা বিস্মিত হইল। বলিল, “তা তোমার বাপ মাকে বল না কেন ?” আমি বলিলাম, “হাজার বার বলিয়াছি। কিছু হয় নাই।” চাপা। বাবুদের বাড়ী গিয়া তাদের হাতে পায়ে ধর না কেন ? আমি । তাতেও কিছু হয় নাই । - চাপ একটু ভাবিয়া বলিল, “তবে এক কাজ করিবি ?” আমি । কি ? চাপ। ছুদিন লুকাইয়া থাকিবি ? আমি । কোথায় লুকাইব ? আমার স্থান কোথায় আছে ? চাপ আবার একটু ভাবিল। বলিল, “আমার বাপের বাড়ী গিয়া থাকিবি ?" ভাবিলাম, মন্দ কি ? আর ত উদ্ধারের কোন উপায় দেখি না। বলিলাম, “আমি কাণ, নূতন স্থানে আমাকে কে পথ চিনাইয়া লইয়া যাইবে ? তাহারাই বা স্থান দিবে কেন ?” চাপা আমার সর্বনাশিনী কুপ্রবৃত্তি মূৰ্ত্তিমতী হইয়া আসিয়াছিল ; সে বলিল, “তোর তা ভাবিতে হইবে না । সে সব বন্দোবস্ত আমি করিব। আমি সঙ্গে লোক দিব, আমি তাদের বলিয়া পাঠাইব । তুই যাস্ত বল ?” মজ্জনোমুখের সমীপবৰ্ত্তী কাঠফলকবৎ এই প্রবৃত্তি আমার চক্ষে একমাত্র রক্ষার উপায় বলিয়। বোধ হইল। আমি সম্মত হইলাম । চাপা বলিল, “আচ্ছ, তবে ঠিক থাকিস। রাত্রে সবাই ঘুমাইলে আমি আসিয়া দ্বারে টোক মারিব ; বাহির হইয়া আসিস ।” আমি সম্মত হইলাম । _ রাত্রি দ্বিতীয় প্রহরে দ্বারে ঠকৃঠক করিয়া অল্প শব্দ হইল। আমি জাগ্রত ছিলাম। দ্বিতীয় বস্ত্র মাত্র লইয়া, আমি দ্বারোদঘাটনপূর্বক বাহির হইলাম। বুঝিলাম, চাপ দাড়াইয়া আছে। তাহার সঙ্গে চলিলাম। একবার ভাবিলাম না—একবার বুঝিলাম না যে, কি ফুক্ষপ্ত করিতেছি। পিতা মাতার জন্য মন কাতর হইল বটে, কিন্তু তখন মনে মনে