পাতা:রাধারাণী-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় খণ্ড শচীন্দ্র বক্ত প্রথম পরিচ্ছেদ এ ভার আমার প্রতি হইয়াছে—রজনীর জীবনচরিত্রের এ অংশ মাকে লিখিতে হইবে। লিখিব। আমি রজনীর বিবাহের সকল উদ্যোগ করিয়াছিলাম—বিলাহের দিন প্রাতে শুনিলাম যে, রজনী পলাইয়াছে, তাহাকে আর পাওয়া যায় না। তাহার অনেক অনুসন্ধান করিলাম, পাইলাম না। কেহ বলিল, সে ভ্রষ্টা। আমি বিশ্বাস করিলাম না। আমি তাহাকে অনেক বার দেখিয়াছিলাম—শপথ করিতে পারি, সে কখন ভ্ৰষ্ট হইতে পারে না। তৰে ইহা হইতে পারে যে, সে কুমারী, কৌমাৰ্য্যাবস্থাতেই কাহারও প্রণয়াসক্ত হইয়া বিবাহাশঙ্কায় গৃহত্যাগ করিয়াছে। কিন্তু ইহাতেও দুইটি আপত্তি ; প্রথম, যে অন্ধ, সে কি প্রকারে সাহস করিয়া আশ্রয় ত্যাগ করিয়া যাইবে ? দ্বিতীয়তঃ, যে অন্ধ, সে কি প্রণয়াসক্ত হইতে পারে? মনে করিলাম, কদাচন। কেহ হাসিও না, আমার মত গণ্ডমূর্ধ অনেক আছে। আমরা খান দুই তিন বহি পড়িয়া, মনে করি, জগতের চেতনাচেতনের গৃঢ়াদপি গৃঢ় তত্ত্ব সকলই নখদর্পণ করিয়া ফেলিয়াছি, যাহা আমাদের বুদ্ধিাত ধরে না, তাহ বিশ্বাস করি না। ঈশ্বর মানি না, কেন না, আমাদের ক্ষুদ্র বিচারশক্তিতে সে বৃহত্তত্বের মীমাংসা করিয়া উঠিতে পারি না। অন্ধের রূপোন্মাদ কি প্রকারে বুঝিব? সন্ধান করিতে করিতে জানিলাম যে, যে রাত্রি হইতে রজনী অদৃশু হইয়াছে, সেই রাত্রি হইতে হীরালালও অদৃশ্ব হইয়াছে। সকলে বলিতে লাগিল, হীরালালের সঙ্গে সে কুলত্যাগ করিয়া গিয়াছে। অগত্য আমি এই সিদ্ধান্ত করিলাম যে, হীরালাল রজনীকে ফঁাকি দিয়া লইয়া গিয়াছে। রজনী পরম সুন্দরী ; কাশী হউক, এমন লোক নাই, যে তাহার রূপে মুগ্ধ হইবে না। হীরালাল তাহার রূপে মুগ্ধ হইয়া, তাহাকে বঞ্চনা করিয়া লইয়া গিয়াছে। অন্ধকে বঞ্চনা করা বড় স্বসাধ্য।