পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/১১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

৭৬ রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ।

এই ফোর্ট উইলিয়াম কালেজ বহু বৎসর জীবিত ছিল। উইলিয়াম কেরী ইহার প্রথম শিক্ষকদগের মধ্যে একজন। আর এক কারণে এই কলেজ বঙ্গদেশে চিরস্মরণীয় হয়েছে। পণ্ডিতবর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কিছুদিন ইহার শিক্ষকতা করিয়া ছলেন এবং সেই সময়েই তাহার সুপ্রসিদ্ধ “বেতালপঞ্চবিংশতি” নামক গ্রন্থ রচনার সংকল্প করেন। উহা ১৮৪৭ সালে মুদ্রিত ও প্রকাশিত হয়। বেতালপঞ্চবিংশতিকে বর্ত্তমান সুললিত বঙ্গভাষার উৎপত্তি-স্থান বলিয়া নির্দেশ করা যাইতে পারে।

একদিকে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের সাহায্যে পরোক্ষভাবে দেশে বাঙ্গালা ভাষায় চর্চা চলিতে লাগিল এবং সেই সঙ্গে বাঙ্গালা শিক্ষার জন্য পাঠশালা প্রভৃতি স্থাপিত হইতে লাগিল, অপরদিকে কলিকাতা সহরের সন্ত্রান্ত গৃহস্থদিগেয় মধ্যে নিজ সন্তানদিগকে ইংরাজী শিক্ষা দিবার প্রবৃত্তি প্রবল হইতে লাগিল। সুবিধা বুঝিয়া কয়েকজন ফিরিঙ্গী কলিকাতার স্থানে স্থানে ইংরাজী স্কুল স্থাপন করলেন। সার্বরণ (Sherburne) নামক একজন ফিরিঙ্গী চিতপুর রোডে একটী স্কুল স্থাপন করিলেন। সুবিখ্যাত দ্বারকানাথ ঠাকুর এই স্কুলে প্রথম শিক্ষা লাভ করেন। মার্টন বাউল (Martin Bowle) নামক আর একজন ফিরিঙ্গী আমড়াতলায় এক স্কুল স্থাপন করেন; স্বপ্রসিদ্ধ মতিলাল শীল সেই স্কুলে শিক্ষা লাভ করিয়াছিলেন। আরটুন পিট্রাস (Arratoon Petres) নামক আর একজন ফিরিঙ্গী আর একটা স্কুল স্থাপন করেন; তাহার যাবতীয় ছাত্রের মধ্যে কলুটোলার কানানিতাই সেন ও খোঁড়া অদ্বৈত সেন প্রসিদ্ধ। ইঁহারা ভাঙ্গা ভাঙ্গা ব্যাকরণ-হীন ইংরাজী বলিতে পারিতেন এবং লিখিতে পারিতেন বলিয়া তৎকালীন কলিকাতা সমাজে ইঁহাদের খ্যাতি প্রতিপত্তির সীমা ছিল না। ইহারা যাত্রা মহোৎসবাদিতে আপনাদের পদগৌরবের চিহ্ন স্বরূপ কাবা চাপকান পরিয়া এবং জরীর জুতা পায়ে দিয়া আসিতেন। লোকে সন্ত্রমের সহিত ইঁহাদের দিকে তাকাইত।

সে সময়ে যে ইংরাজী শিক্ষা দেওয়া হইত, তাহার বিষয়ে কিছু বলা আবশ্যক। সে সময়ে বাক্য-রচনা-প্রণালী বা ব্যাকরণ প্রভৃতি শিক্ষা দিবার দিকে দৃষ্টি ছিল না। কেবল ইংরাজী শব্দ ও তাহার অর্থ শিখাইবার দিকে প্রধানতঃ মনোযোগ দেওয়া হইত। যে যত অধিক সংখ্যক ইংরাজী শব্দ ও তাহার অর্থ কণ্ঠস্থ করিত, ইংরাজী ভাবার স্বশিক্ষিত বলিয়া তাহার তত খ্যাতি প্রতিপত্তি হইত। এরূপ শোনা যায় শ্রীয়ামপুরের মিশনারিগণ সে সময়ে