বহুবাজারের মোড়ে আসিয়া চন্দ্রশেখর বলিলেন—“আপনি আর আসিবেন না”; হেয়ার বলিলেন,—“না, চল মাধব দত্তের বাজারের নিকট দিয়া আসি।” আবার সঙ্গে সঙ্গে চলিলেন। কালেজের দীঘির কোণে আসিয়া বলিলেন—“আমি দাঁড়াইতেছি তুমি যাও।” চন্দ্রশেখর চলিয়া গেল। সে বালক তখন পটুয়াটোলা লেনে থাকিত। বালকটী আসিয়া দ্বার দিয়া বস্ত্র পরিবর্তন করিতেছে এমন সময়ে শোনা গেল কে দ্বারে আঘাত করিতেছে; লোকে দেখিল হেয়ার। হেয়ার জিজ্ঞাসা করিলেন,—Is Chunder in?” চন্দ্র কি পৌছিয়াছে?” হায় সে প্রেম কিরূপ যাহা এতদূর বালকটীর সঙ্গে আসিয়া ও তৃপ্ত হইতে পারে না, আবার ভাবে—ছেলেটা ঘরে পৌঁছিল কি না একবার দেখি।
এই উদারচেতা সহৃদয় পুরুষের তত্ত্বাবধানে রামতনু হিন্দুকালেজে পড়িতে লাগিলেন।
পঞ্চম পরিচ্ছেদ।
বিপ্লবের সূচনা।
অতঃপর আমরা বঙ্গদেশের সামাজিক ইতিবৃত্তের সন্ধিক্ষণে উপস্থিত হইতেছি। ১৮২৫ হইতে ১৮৪৫ খ্রীষ্টাব্দ পর্য্যন্ত বিংশতিবর্ষকে বঙ্গের নবযুগের জন্মকাল বলিয়া গণনা করা যাইতে পারে। এই কালের মধ্যে কি রাজনীতি, কি সমাজনীতি, কি শিক্ষাবিভাগ, সকলদিকেই নবযুগের প্রবর্তন হইয়াছিল। তাহার ক্রম কিঞ্চিং নির্দ্দেশ করা আবশ্যক বোধ হইতেছে।
ইংরাজগণ এদেশে বাণিজ্য করিতে আসিয়া কিরূপে রাজা হইয়া বসিলেন, সে ইতিবৃত্ত আর বর্ণনা করিবার প্রয়োজন নাই। তাহা ইতিহাস-পাঠক মাত্রেই অবগত আছেন। কিন্তু বণিকদিগের মনে রাজভাব প্রবেশ করা, ইহা দুই দশ দিনে ঘটে নাই। যতদিন তাঁহারা বণিক ছিলেন, ততদিন ভাবিতেন এদেশের লোকের সুখ দুঃখের সঙ্গে, উন্নতি অবনতির সঙ্গে, আমাদের সম্বন্ধ কি? আমরা বৈধ অবৈধ যেরূপ উপায়েই হউক এখান হইতে অর্থোপার্জ্জন করিয়া লইয়া দেশে যাইব এইমাত্র আমাদের কাজ। এইভাব কোম্পানির কর্তৃপক্ষের মনে এবং