পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/১৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চম পরিচ্ছেদ।
১০৫

লাগিল। ঐ সকল পত্রে এমন বিজ্ঞতা, রাজনীতিজ্ঞতা, ও লোকচরিত্রদর্শনক্ষমতার পরিচয় ছিল যে, কয়েকখানি পত্র মুদ্রিত হইতে না হইতে চতুর্দ্দিকে সেই চর্চ্চা উঠিয়া গেল। রাজপুরুষদিগের দৃষ্টিও সে দিকে আকৃষ্ট হইল। কাটিওয়াড়ের রাজা অনুসন্ধান করিতে লাগিলেন কে এই সকল পত্র লিখিতেছে। ক্রমে সন্ন্যাসী ধরা পড়িলেন। সন্ন্যাসী কিছুই গোপন করিলেন না; রাজাকে বলিলেন,—“আপনার প্রজারা আমার নিকট আসিয়া কাঁদে, তাই তাহাদের দুঃখে দুঃখী হইয়া লিখিয়াছি, ইচ্ছা হয় আপনি শাসনকার্য্যের উন্নতি করুন, নতুবা আপনার যেরূপ অভিরুচি হয় করুন।” রাজা সন্ন্যাসীকে কারাগারে নিক্ষেপ করিলেন। সন্ন্যাসী একবর্ষকাল কারাদণ্ড ভোগ করিলেন। এদিকে দেশময় প্রবল আন্দোলন চলিল। একবর্ষ পরে রাজা সন্ন্যাসীকে কারামুক্ত করিয়া তাঁহাকে প্রধান মন্ত্রীর পদ গ্রহণ করিতে অনুরোধ করিলেন। সন্ন্যাসী বলিলেন—“আমার রাজপদের লালসা নাই, থাকিলে সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করিব কেন? তবে মহারাজ যদি দেশ সুশাসন করিতে চান, সে বিষয়ে পরামর্শ দিতে পারি।” তদবধি সন্ন্যাসীর রাজত্ব আরম্ভ হইল। সন্ন্যাসী প্রথম পরামর্শ এই দিলেন যে “পুরাতন উৎকোচগ্রাহী কর্ম্মচারীদিগকে পদচ্যুত করিরা তৎ তৎ পদে ইংরাজী-শিক্ষিত ও ইংরেজ গবর্ণমেণ্টের কার্য্যকলাপে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদিগকে নিযুক্ত করিতে হইবে।” তদনুসারে সন্ন্যাসী বোম্বাই সহরে আসিলেন, এবং একদল ইংরাজী-শিক্ষিত কর্ম্মচারী লইয়া গেলেন। নারায়ণ মহাদেব পরমানন্দ মহাশয় সেই সঙ্গে গিয়াছিলেন। তাঁহার মুখে শুনিয়াছি তাঁহারা প্রায় এক বৎসরকাল সন্ন্যাসীর অধীনে থাকিয়া রাজ্যশাসন করিয়াছিলেন। তৎপরে পূর্বপদচ্যুত কর্ম্মচারীগের চক্রাস্তে রাজার আবার মতিভ্রম হইল, এবং এই আদেশ প্রচার হইল যে সন্ন্যাসীর দলকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কাটিওরাড় ছাড়িয়া যাইতে হইবে। তদনুসারে সন্ন্যাসীর সহিত তাঁহারা সকলে চলিয়া আসিলেন। তাঁহার মুখে শুনিয়াছি সন্ন্যাসী তাঁহাদের নিকট তাঁহার গুরু ডিরোজিওর নাম সর্ব্বদা করিতেন এবং তাঁহার অশেষ প্রশংসা করিতেন। আমি কলিকাতায় ফিরিয়া রামতনু লাহিড়ী মহাশয়কে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলাম তাঁহাদের দলের মধ্যে কে সন্ন্যাসব্রত লইয়া দেশত্যাগী হইয়াছিলেন, তিনি বলিতে পরিলেন না।

 ডিরোজিওর কার্য গ্রহণের পর একবৎসর যাইতে না যাইতে তাঁহার শিষ্যগণ এক ঘননিবিষ্ট দলে পরিণত হইয়া পড়িলেন। এই ১৮২৮ সালের মধ্যেই

 ১৪