পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/১৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চম পরিচ্ছেদ।
১১৩

করিলেন। তৎপরে প্রতিবেশিগণ দলবদ্ধ হইয়া কৃষ্ণমোহনের মাতামহ রামজয় বিদ্যাভূষণ মহাশয়কে ধরিয়া বসিল—“আপনার দৌহিত্রকে বর্জ্জন করিতে হইবে নতুবা আপনাকে লইয়া চলিব না।” ব্রাহ্মণ স্বীয় দৌহিত্রের প্রতি কোপে অধীর হইয়া গেলেন। বেচারা কৃষ্ণমোহন এ সকলের কিছুই জানেন না। তিনি সায়ংকালে গৃহে সমাগত হইলে, সে ভবনে আর আশ্রয় পাইলেন না। সে রাত্রে যান কোথায়, উপায়ান্তর না পাইয়া স্বীয় বন্ধু দক্ষিণারঞ্জনের ভবনে গিয়া আশ্রয় লইলেন। তখন কৃষ্ণমোহন ও রসিককৃষ্ণ মল্লিক হেয়ারের স্কুলে শিক্ষকতা করিতেন। কৃষ্ণমোহন এই বৎসরের মে মাস হইতে Inquirer নামে এক সংবাদপত্র প্রচার করিতে আরম্ভ করেন। সেই পত্রে তিনি নির্যাতনকারী হিন্দুগণের প্রতি উপহাস বিদ্রুপবর্ষণ করিতে লাগিলেন। নব্যদলের সমরভেরী বাজিয়া উঠিল।
 ১৮৩২ সালের ২৮ আগষ্টের Inquirer পত্রিকাতে প্রকাশ হইল যে ডিরোজিওর শিষ্যদলের একজন অগ্রগণ্য ব্যক্তি মহেশচন্দ্র ঘোষ খ্রীষ্টধর্ম্মে দীক্ষিত হইয়াছেন। মহেশ বাল্যকালে অত্যন্ত জেঠা, ইয়ার ও উচ্ছৃঙ্খল বলিয়া বিদিত ছিলেন। একারণে রামগোপাল ঘোষ তাঁহার সঙ্গে বড় মিশিতেন না। কিন্তু ডিরোজিওর সংশ্রবে আসিয়া মহেশের জীবনে পরিবর্ত্তন ঘটিয়াছিল। তিনি ধর্ম্মানুরাগ ও সচ্চরিত্রতাগুণে সকলের শ্রদ্ধার পাত্র হইয়াছিলেন।
 সেই ১৮৩২ সালেরই ১৭ই অক্টোবর কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় খ্রীষ্টধর্ম্মে দীক্ষিত হইলেন। সে কালের লোকের মুখে শুনিয়াছি তখন এরূপ জনরব উঠিয়াছিল যে হিন্দুকালেজের সমুদয় ভাল ভাল ছাত্র খ্রীষ্টধর্ম্ম অবলম্বন করিবে।
 ১৮৩৩ সালে লাহিড়ী মহাশয় কালেজ হইতে উত্তীর্ণ হইয়া হিন্দুকালেজে শিক্ষকতা পদ গ্রহণ করিলেন। এই বৎসরে রামমোহন রায় ইংলণ্ডের ব্রিষ্টল নগরে ২৭শে সেপ্টেম্বর দেহত্যাগ করিলেন; এবং রামমোহন রায়ের চেষ্টায় ও মহামতি লর্ড উইলিয়ম বেটিঙ্কের পরামর্শে, গরর্ণমেণ্টের অধীনে উচ্চ উচ্চ পদ এদেশীয় ইংরাজী শিক্ষিত ব্যক্তিদিগের জন্য উন্মুক্ত হইল। ঐ সালে ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির সনদপুনগ্রহণের সময় পার্লেমেণ্ট মহাসভা ভারতশাসনের উন্নতিবিধানের উদ্দেশে এক নুতন আইন বিধিবদ্ধ করেন। তাহার ৮৭ ধারাতে লিখিত হইল;—