পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/১৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ।
১১৫

করিত। অনেকে সেজন্য গুরুজনের হস্তে কঠিন নিগ্রহ সহ্য করিত তথাপি যাইতে বিরত হইত না। এই সকল বালকের চিত্তেই ডিরোজিওর প্রভাব প্রধানরূপে কার্য্য করিয়াছিল। ইহাদের সকলেই তাঁহার একাডেমিক এসোশিএসনের সভ্য হইয়াছিল; ইহাদের অনেকে রোগশয্যার তাঁহার সেবা করিয়াছিল। রামতনু লাহিড়ী মহাশয় এই দলের কনিষ্ঠ ভ্রাতা ছিলেন বলিলে অভুক্তি হয় না। তিনি প্রতিভা বলে ও বিদ্যাবুদ্ধিতে, রসিককৃষ্ণ মল্লিক, কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় বা রামগোপাল ঘোষের সমকক্ষ ছিলেন না; বরং অনেক বিষয়ে ইহাদিগকে জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা ও উপদেষ্টার ন্যায় জ্ঞান করিতেন। কিন্তু তাহা হইলেও চরিত্রের গুণে লাহিড়ী মহাশয় ইহাদের সকলের গভীর প্রীতি ও শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। ইহাদের সকল কার্য্যে তিনি সঙ্গে থাকিতেন; সকল চিন্তা ও শ্রমের অংশী হইতেন; এবং ডিরোজিওর উপদেশের অনুসরণে সকলের অগ্রগণ্য ছিলেন বলিলে অত্যুক্তি হয় না। পঠদ্দশার পরে ও যৌবনের কার্য্যক্ষেত্রে ইহাদের বন্ধুতা অক্ষুণ্ণ ছিল। কেবল যৌবনে কেন ইহাদের অধিকাংশের সহিত বাৰ্দ্ধক্যেও লাহিড়ী মহাশয়ের অতি গভীর প্রীতি ও প্রগাঢ় আত্মীয়তা বিদ্যমান ছিল। বাল্যের সহাধ্যায়ীদিগের মধ্যে সেরূপ প্রগাঢ় বন্ধুক্ত বর্ত্তমান সময়ে অসম্ভব হইয়াছে।
 অতঃপর লাহিড়ী মহাশয়ের যৌবন-সুহৃদগণের মধ্যে কতিপয় বিশিষ্ট ব্যক্তির জীবনচরিত সংক্ষেপে উল্লেখ করিতে যাইতেছি।

কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়।

 ইনি ডিরোজিওর শিষ্যগণ ও লাহিড়ী মহাশয়ের যৌবন-সুহৃদগণের মধ্যে সর্ব্বাগ্রগণ্য ব্যক্তি। ১৮১৩ সালে কলিকাতার ঝামাপুকুর নামক স্থানে বর্ত্তমান বেচুচাটুর্য্যের স্ত্রীটে মাতামহের আলয়ে ইহার জন্ম হয়। ইহাঁর মাতামহের নাম রামজয় বিদ্যাভূষণ। বিদ্যাভূষণ মহাশয় কলিকাতার তৎকালপ্রসিদ্ধ ধনী, যোড়াসাঁকো নিবাসী, শান্তিরাম সিংহের ভবনে সভাপণ্ডিত ছিলেন। এই শাস্তিরাম সিংহ মহাভারত-প্রকাশক সুবিখ্যাত কালীপ্রসন্ন সিংহের পিতামহ। কৃষ্ণমোহনেয় পিতার নাম জীবনকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁহার নিবাস ২৪ পরগণায় নবগ্রাম নামক গ্রামে ছিল। জীবনকৃষ্ণ কুলীন ব্রাহ্মণের সস্তান ছিলেন; এবং বিদ্যাভূষণ মহাশয়ের দুহিতা শ্রীমতী দেবীর পাণিগ্রহণ করিয়া শ্বশুরা