পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/১৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ।
১২৯

সহরে সুতার কারবার ছিল। প্রাচীন কলিকাতার সুবিখ্যাত শেঠবংশীয়গণ এই তিলি জাতীয় বণিকদল ভুক্ত ছিলেন। সুতরাং একথা বোধ হয় বলিতে পারা যায় যে, ইহার কলিকাতার সর্ব্বাপেক্ষা প্রাচীন অধিবাসী ছিলেন।

 সেকালের রীতি অনুসারে রসিককৃষ্ণ কিছুদিন গুরুমহাশয়ের পাঠশালে পড়িয়া ও সামান্যরূপ ইংরাজী শিখিয়া হিন্দুকালেজে প্রেরিত হন। অল্পকাল মধেই সেখানে বিদ্যা বুদ্ধির জন্য প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। ১৮৭৮ সালে ডিরোজিও যখন হিন্দুকালেজে আসিলেন, রসিককৃষ্ণ বোধ হয় তখন হিন্দুকলেজের প্রথম শ্রেণীতে পাঠ করেন। তিনিও আকৃষ্ট হইয়া ডিরোজিও দলে প্রবিষ্ট হইলেন; এবং অপর সকলের ন্যায় আত্মীয় স্বজনের হস্তে নিগ্রহ সহ্য করিতে লাগিলেন।

 এরূপ জনশ্রুতি, কালেজে পাঠকালে নিম্নলিখিত ঘটনাটা ঘটে। তৎকালে কলিকাতা সুপ্রিমকোটে হিন্দু সাক্ষীদিগকে তামা, তুলসী ও গঙ্গাজল স্পর্শ করিয়া শপথ পূর্ব্বক সাক্ষ্য দিতে হইত। তামা তুলসী গঙ্গাজল আনিবার জন্য একজন উড়িয়া ব্রাহ্মণ নিযুক্ত ছিল। আমরা প্রথমে কলিকাতাতে আসিয়া তাহাকে যখন দেখিয়াছি, তখন তাহার বৃদ্ধাবস্থা। ঐ উড়িয়া ব্রাহ্মণ একখানি তাম্রকুণ্ডে করিয়া তুলসী ও গঙ্গাজল লইয়া সাক্ষীদের সন্মুখে আনিয়া ধরিত, তাহা স্পর্শ করিয়া হিন্দু সাক্ষাদিগকে শপথ করিতে হইত। যখন এই নিয়ম ছিল, তখন একবার কোনও মোকদ্দমাতে সাক্ষী হইয়া বালক রসিককৃষ্ণকে সুপ্রিম কোর্টে উপস্থিত হইতে হয়। তিনি সাক্ষ্য দিতে দাঁড়াইলে উড়িয়া ব্রাহ্মণ প্রথামত তাম্রকুণ্ড লইয়া উপস্থিত হইল। কিন্তু মধ্যে এক বিষম সংকট উপস্থিত। রসিককৃষ্ণ তামা তুলসী গঙ্গাজল স্পর্শ করিতে চাহিলেন না; স্থিরভাবে দণ্ডায়মান হইয়া ভাবিতে লাগিলেন। আদালত শুদ্ধ লোক বিস্ময়ে মগ্ন হইয়া গেল। বিচারপতি কারণ জিজ্ঞাসা করতে রসিক বলিলেন—“আমি গঙ্গা মানি না।” যখন ইণ্টারপ্রিটার উচ্চৈঃস্বরে ইংরাজীতে অনুবাদ করিয়া জজকে শুনাইলেন— “I do not believe in the sacredness of the Ganges” তখন একেবারে চারিদিকে ইস্ ইস্ শব্দ উঠিয়া গেল; হিন্দু শ্রোতৃগণ কাণে হাত দিলেন। অৰ্দ্ধ দণ্ডের মধ্যে এই সংবাদ সহরে ছড়াইয়া পড়িল। “মল্লিকদেয় বাটীর ছেলে প্রকাশ্য আদালতে দাঁড়াইয়া বলিয়াছে গঙ্গা মানি না; ঘোর কলি উপস্থিত, দেখ কালেজের শিক্ষার কি ফল!” সম্প্রতি কুমারী কলেটের লিখিত যে রামমোহন রায়ের জীবনচরিত