পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/১৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ।
১৪৩

 ১৮৬৮ সালে তিনি বঙ্গদেশের ব্যবস্থাপক সভার সভ্যরূপে মনোনীত হন। এই পদে দুই বৎসর প্রতিষ্ঠিত থাকিয়া কায়মনে স্বদেশের কল্যাণ-সাধনের চেষ্টা করিয়াছিলেন।

 তাঁহার সহধর্ম্মিণীর পরলোক হইলে তিনি অনেকটা সংসারে নির্লিপ্ত হইয়া পড়েন; এবং প্রেততত্ত্বের আলোচনাতে মনোনিবেশ করেন। তাঁহার এই স্বভাব ছিল যে, যে বিষয়ে মনোনিবেশ করিতেন তাহার আধখানা জানিয়া সন্তুষ্ট হইতেন না। যখন প্রেততত্ত্বের আলোচনাতে প্রবৃত্ত হইলেন, তখন ইংলণ্ড ও আমেরিকা হইতে ভূরি ভুরি গ্রন্থ আনাইয়া পাঠ করিতে ও প্রচার করিতে আরম্ভ করিলেন। এ বিষয়ে তাঁহার বাল্যসুহৃদ ও তাঁহার বৈবাহিক শিবচন্দ্র দেব মহাশয় তাঁহার প্রধান উৎসাহদাতা ছিলেন। দুই বৈবাহিকে মিলিয়া সর্ব্বদা এই বিষয়ের আলোচনা করিতেন। তাঁহারা উভয়ে প্রেত-তত্ত্ব বিষয়ে গ্রন্থ প্রণয়ন করিয়াছিলেন। ১৮৮১ খ্রীষ্টাব্দে ম্যাদাম ব্লাভার্টস্কি ও কর্ণেল অলকট যখন এদেশে আসিলেন, তখন তিনি তাঁহাদের স্থাপিত থিওসোফিকাল সোসাইটীতে যোগ দিলেন, এবং উক্ত সভার বঙ্গদেশীর শাখার প্রধান পুরুষ হইয়া দাঁড়াইলেন। তখন সকল প্রকার আধ্যাত্মিক বিষয়ের আলোচনাতে তাঁহার বালকের ন্যায় উৎসাহ দেখিতাম। আমাদিগকে সর্ব্বপ্রকার আধ্যাত্মিক বিষয়ের চর্চ্চাতে সর্ব্বদা উৎসাহিত করিতেন। তাঁহার কাছে বসিলে অনেক জ্ঞানলাভ করা যাইত।

 এইরূপে জ্ঞানালোচনা, সৎসঙ্গ, ও সৎপ্রসঙ্গে তাঁহার কাল এক প্রকার সুখেই কাটিয়া যাইতে লাগিল। অবশেষে ১৮৮৩ সালে দারুণ উদরী রোগে আক্রান্ত হইলেন। ঐ রোগে কিছুদিন কষ্ট পাইয়া ঐ সালের ২৩শে. নবেম্বর ইহলোক পরিত্যাগ করলেন।

 তাঁহার মৃত্যুর পর তাঁহার স্বদেশীয় ও বিদেশীয় বন্ধুগণ সম্মিলিত হইয়া এক সভা করিয়া, তাঁহার দুই স্মৃতিচিহ্ন স্থাপন কৰিয়াছেন। মেটকাফ হলে তাঁহার এক ছবি আছে, এবং কলিকাতার টাউন হলে এক প্রস্তর-নির্ম্মিত উত্তমাঙ্গ আছে।