পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/১৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সপ্তম পরিচ্ছেদ
১৫১

ক্লাস্তি বোধ করিতেন না। এইরূপে কালীচরণ বাবু পরীক্ষাতে উত্তীর্ণ হইতে সমর্থ হইয়াছিলেন।

 এই সময়ের আর একটা স্মরণীয় ঘটনা, তাহার জ্যেষ্ঠ সহোদর কেশব চন্দ্রের যশোহর গমন। কেশব জজের শেরেস্তাদারের পদে উন্নীত হইয়া আলিপুর হইতে যশোহরে গমন করেন। ঠিক কোন সালে যশোহর গিয়াছিলেন তাহা জানা যার না; কিন্তু সেখানে গিয়া অধিক দিন সুখে যাপন করিতে পারেন নাই। এরূপ শোনা যায়, তিনি সেখানে গিয়া অল্পদিন পরেই ম্যালেরিয়া জ্বরে আক্রান্ত হইয়া নিজের কার্ষ্যের সাহায্যার্থ রাধাবিলাসকে যশোহরে লইয়া যান। ১৮৩৫ কি ১৮৩৬ সালে যশোহরে ম্যালেরিয়া জ্বর প্রথম দেখা দেয়। অতএব তিনি ১৮৩৪ কি ১৮৩৫ সালে সেখানে গিয়া থাকিবেন।

 যশোহরে ম্যালেরিয়া জ্বরের প্রথম প্রাদুর্ভাবের ইতিবৃত্ত এই যে ১৮৩৫ কি ১৮৩৬ সালের শীতকালে পাঁচ শত কি সাত শত কয়েদী যশোহরের সন্নিকটে একটা রাস্তা নির্ম্মাণ কার্য্যে নিযুক্ত ছিল। ঐ রাস্তাটা যশোহর হইতে মহম্মদপুর দিয়া ঢাকার অভিমুখে যাইবে এইরূপ স্থির ছিল। মহম্মদপুরে নদীর অপর পারের কাজ শেষ হইলে, পৱ বৎসর জানুয়ারি মাসে কয়েদগণ নদী পার হইয়া মহম্মদপুরের পারে কাজ আরম্ভ করিল। তাহারা রামসাগর ও হরেকৃষ্ণপুরের মধ্যস্থিত রাস্তা প্রস্তুত করিতেছে, এমন সময়ে মার্চ মাসে হঠাৎ তাহাদের মধ্যে এক প্রকার জ্বর দেখা দিল; এবং অল্পদিনেই প্রায় দেড়শত মজুরের মৃত্যু হইল। যাহার মজুর খাটাইতেছিল তাহারা প্রাণ ভয়ে, কাজ ছাড়িয়া পলাইল; রাস্তা নির্ম্মাণ পড়িয়া রহিল। ঐ জ্বর ক্রমে মহম্মদপুর নগরে ও যশোহরে প্রবেশ করিয়া সহর নিঃশেষ করিতে লাগিল। এই জ্বরই কয়েক বৎসরের মধ্যে নদীয়া জেলাতে প্রবেশ করিয়া উলা (বীরনগর) গ্রামকে উৎসন্ন করিয়া দিল। পরে গঙ্গাপার হইয়া হুগলী বৰ্দ্ধমান প্রভৃতিকেও উৎসন্ন করিয়াছে।

 এই ম্যালেরিয়া জ্বরে অগ্রে রাধাবিলাসের প্রাণ গেল; পরে কেশবচন্দ্রও তাহাতে আক্রান্ত হইলেন। তিনি শেরেস্তাদারি কর্ম্ম পাইয়াই পৈতৃক বাসভবনের শ্রীবৃদ্ধি ও পিতামাতার আর্থিক অবস্থার উন্নতি সাধনে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন। কিন্তু সে সংকল্প সম্পূর্ণরূপে চরিতার্থ করিবার পূর্বেই তাঁহাকে