পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/২১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সপ্তম পরিচ্ছেদ।
১৭১

১৮৪৪ সালে দুইটী ঘটনা ঘটে। প্রথম, বর্ত্তমান মেটকাফ হলের নির্ম্মাণকার্য্য শেষ হইলে পাবলিক লাইব্রেরী সেই ভবনে উঠিয়া আসে। নব্যবঙ্গের অন্যতম নেতা প্যারীচাঁদ মিত্র মহাশয় উহার লাইব্রেরীয়ান নিযুক্ত হওয়াতে লাইব্রেরিটী রামগোপাল ঘোষ, তারাচাঁদ চক্রবর্ত্তী, রামতনু লাহিড়ী প্রভৃতি যুবকদলের একটা সম্মিলন ও জ্ঞানালোচনার ক্ষেত্র হইয়া উঠে। বিশেষতঃ রামগোপাল ঘোষ এই লাইব্রেরীর একজন প্রধান উৎসাহদাতা ও অধ্যক্ষ হন।

 দ্বিতীয় ঘটনা, দ্বারকানাথ ঠাকুর মহাশয়ের দ্বিতীয়বার বিলাত গমন। এবার তিনি বিলাত যাত্রার সময় নিজের উদার হৃদয় ও দেশহিতৈষিতার অনুরূপ একটী সৎকার্য্য করেন। কলিকাতা মেডিকেল কালেজ স্থাপনে তিনি যে বিশেষ সহায়তা করিরাছিলেন তাহা অগ্রেই বলিয়াছি। উক্ত কালেজের বর্তমান হাসপাতালটী নির্ম্মাণের জন্য অনেক টাকা দিয়াছিলেন, তাহারও উল্লেখ করিয়াছি। কিন্তু তাঁহার স্বদেশহিতৈষিতা বা দানশক্তি তাহাতেও পর্য্যবসিত হয় নাই। ১৮৪৪ সালে তিনি দ্বিতীয়বার ইংলণ্ড-যাত্রার অভিপ্রায় করিলেন; সেই সঙ্গে সঙ্গে সংকল্প করিলেন যে নিজের ব্যয়ে মেডিকেল কালেজের কয়েকজন ছাত্রকে ইংলণ্ডে লইয়া গিয়া শিক্ষিত করিয়া আনিবেন। তদনুসারে এডুকেশন কাউন্সিলের নিকট স্বীয় অভিপ্রায় ব্যক্ত করিলেন। উক্ত কাউন্সিলের চেষ্টাতে চারিজন ছাত্র জুটিল। তন্মধ্যে শ্রীমান ভোলানাথ বসু ও শ্রীমান্‌ সূর্য্যকুমার চক্রবর্ত্তীর ব্যয় তিনি দিলেন; এবং শ্রীমান দ্বারকানাথ বসু ও শ্রীমান্‌ গোপাল লাল শীলের ব্যয় গবর্ণমেণ্ট দিলেন। এই চারিজন ছাত্র ডাক্তার এডোয়ার্ড গুডিভের তত্ত্বাবধানে দ্বারকানাথ ঠাকুরের সমভিব্যাহারে ইংলণ্ডে গমন করেন। দুঃখের বিষয় এই বিলাত যাত্রাই দ্বারকানার্ ঠাকুর মহাশয়েয় শেষ যাত্রা হইল। সেখানে ১৮৪৬ সালে তাঁহার দেহান্ত হয়; এবং তাঁহার দেহ লণ্ডন সহরের এক সুপ্রসিদ্ধ সমাধিক্ষেত্রে সমাহিত রহিয়াছে।

 এদিকে এই সময়ে দেশের শিক্ষিত সমাজের অবস্থা দিন দিন শোচনীয় হইয়া উঠিতেছিল। ডিরোজিও যে স্বাধীন চিন্তার স্রোত প্রবাহিত করিয়া দিয়া গিয়াছিলেন তাহা এই সময়ে বঙ্গসমাজে পুর্ণামাত্রায় কাজ করিতেছিল। শিক্ষিতদলের মধ্যে সুরাপানটা বড়ই প্রবল হইয়া উঠিয়াছিল। হিন্দুকালেজের ষোল সতের বৎসরের বালকের সুরাপান করাকে শ্লাঘার বিষয় মনে করিত। বঙ্গের অমর