পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/২১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
l১৭৪
রামতনু লাহিড়ী তৎকালীন বঙ্গসমাজ।

লেন। সেই সাধুর মুখে কোনও শোক বা বিকারের চিহ্ন পরিলক্ষিত হইল না। কেশবচন্দ্রর দেহত্যাগের পরেই সমুদয় সংসারের ভার কনিষ্ঠভ্রাতা রামতনুর স্বন্ধে পড়িয়া গেল। তিনি যথাসাধ্য সে ভারবহন করিতে লাগিলেন।

 দ্বিতীয়, এই ঘটনার অল্পকাল পরেই বোধ হয় তাহার তৃতীয়বার দ্বার পরিগ্রহ হয়। তিনি যখন হিন্দুকালেজের তৃতীয় কি দ্বিতীয় শ্রেণীতে পাঠ করেন তখন কাঁদবিলা গ্রামে এক ব্রাহ্মণ কন্যার সহিত তাঁহার প্রথম পরিণয় হয়। ঐ পত্নী চারি পাঁচ বৎসরের অধিক জীবিত ছিলেন না। তৎপরে পাবনার অন্তর্গত মথুরা নামক গ্রামের এক ব্রাহ্মণের কন্যাকে পুনরায় বিবাহ করেন। এরূপ শুনা যায়, এই বিবাহে তাঁহাকে কিঞ্চিৎ ক্লেশ পাইতে হইয়াছিল। কি কারণে জানি না, বোধ হয় তিনি ডিরোজিওর শিষ্যদলের সহিত সংসৃষ্ট ছিলেন বলিয়াই হইবে, তাঁহার দ্বিতীয় শ্বশুর স্বীয় কন্যাকে পতিগৃহে প্রেরণ করিতে চাহিতেন না। ইহা লইয়া দুই পরিবারে মনান্তর ঘটে; এবং সে কারণে লাহিড়ী মহাশয়কে মানসিক অশাস্তি ভোগ করিতে হইয়াছিল। বোধ হয় এই পত্নীকেই লক্ষ্য করিয়া রামগোপাল ঘোষ তাঁহার দৈনিক লিপিতে এক স্থানে লিখিতেছেনঃ—

 April 4th, 1839—But our conversation did not thicken till we touched the subject of women—bright women! We spoke of the peculiarities of each other's wives. * * * Poor Ramtonoo appeared to be worried by his wife. But I should not indulge myself in writing the secrets of my friends in this book.”

 ঘোষজ মহাশয় আপনার ভদ্রতার দ্বারা আপনাকে বাধা না দিলে, বোধ হয় লাহিড়ী মহাশয়ের মানসিক অশাস্তির সমগ্র কারণটা ব্যক্ত হইয়া পড়িত।

 যাহা হউক দ্বিতীয় বিবাহ লাহিড়ী মহাশয়ের সুখের কারণ হয় নাই। আর সে পত্নীকেও শ্বশুর ঘরে আসিতে হয় নাই। তিন চারি বৎসরের মধ্যে তিনিও গত হন। তৎপরে এই সময়ে কি ইহার কিঞ্চিৎ পূর্ব্বে হাবড়ার সন্নিহিত সাঁতরাগাছি গ্রামের স্বৰ্গীয় কৃষ্ণকিশোর চৌধুরীর কনিষ্ঠ কন্যার সহিত তাঁহার তৃতীয়বার পরিণয় হয়। ইনিই তাঁহার সস্তানগণের জননী।

 তৃতীয়, তাঁহার আরাধ্য জননীদেবী এই সময়ে কঠিন পীড়াতে আক্রাস্ত হন। কৃষ্ণনগরে রাখিলে তাঁহার চিকিৎসার সুব্যবস্থা হইবার আশা না দেখিয় তাঁহাকে কলিকাতাতে আনা হয়। যে মাতাকে কেশবচন্দ্র পুষ্প চন্দন দ্বারা পূজা