পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/২২

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ।

নগরের রাজবংশের কিঞ্চিৎ ইতিবৃত্ত অগ্রে বলার প্রয়োজন। উক্ত ইতিবৃত্ত আমি যথাসাধ্য সংক্ষিপ্ত ভাবে বর্ণন করিব। কিন্তু তাহা হইলেও মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র ও রাজা শ্রীশচন্দ্র এই রাজদ্বয়ের বিবরণ অপেক্ষাকৃত সবিস্তররূপে বর্ণন করিতে হইবে; কারণ ইহাঁরা কৃষ্ণনগরের, শুধু কৃষ্ণনগরের কেন সমগ্র নদীয়ার, খ্যাতি প্রতিপত্তিলাভ বিষয়ে বিশেষরূপে সহায়তা করিয়াছেন।

 নদীয়ার রাজারা এদেশে বহুকাল সুপ্রসিদ্ধ। আমরা বালককালে পঞ্জিকাতে প্রথম পৃষ্ঠাতেই পড়িতাম “শ্রীশচন্দ্র নৃপতেরনুজ্ঞয়া” অর্থাৎ শ্রীশচন্দ্র নৃপতির আজ্ঞা ক্রমে সংকলিত। অনুসন্ধান করিলেই শুনিতাম নদীয়ার রাজারা হিন্দুসমাজপতি, কুলধর্ম্মের রক্ষক, ও গুণিগণের উৎসাহ দাতা। এই দেশীয় রাজগণ একসময়ে দেশের মহোপকার সাধন করিয়াছেন। যখন সমগ্র দেশ যবন রাজাদিগের করকবলিত হইয়া মুহ্যমান হইতেছিল, তখন তাঁহারা স্বীয় মস্তকে ঝড়বৃষ্টি সহিয়া দেশমধ্যে জ্ঞানী ও গুণীজনকে রক্ষা করিয়াছেন; এবং শিল্প, সাহিত্য, কলাদির উৎসাহদান করিয়াছেন। যবনাধিকার কালে দেশীয় রাজগণ অনেক পরিমাণে সর্ব্বময় কর্ত্তা ছিলেন। তাঁহাদের দেয় নিৰ্দ্ধারিত রাজস্ব দিলেই তাঁহারা স্বীয় অধিকার মধ্যে যথেচ্ছ বাস করিতে পারিতেন। সুতরাং তাঁহারা পাত্র মিত্র সভাসদে পরিবেষ্টিত হইয়া সুখেই বাস করিতেন। জ্ঞানী ব্যক্তিগণ অনেক সময়ে ইঁহাদের আশ্রয়ে বাস করিয়া নিরাপদে স্বীয় স্বীয় প্রতিভাকে বিকাশ করিবার অবসর পাইতেন। ইহার নিদর্শন এখনও বিদ্যমান রহিয়াছে। এখনও পুরাতন রাজধানী সকলের সন্নিকটেই, বিষ্ণুপুরের সুগায়ক ও কৃষ্ণনগরের সুকারিকরদিগের ন্যায়, শিল্প সাহিত্যাদির ভগ্নাবশেষ দৃষ্ট হইতেছে।

 অষ্টাদশ শতাব্দীতে নদীয়া-রাজ কৃষ্ণচন্দ্র এ বিষয়ে মহাকীর্ত্তি লাভ করিয়াছিলেন। বস্তুতঃ, বিক্রমাদিত্যের রাজসভা না থাকিলে যেমন আমরা কালিদাসের অপূর্ব্ব কীর্ত্তি পাইতাম না, তেমনি গুণগ্রাহী কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের রাজসভা না থাকিলে ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল পাইতাম না।

 ১৬৮৬ খ্রীষ্টাব্দের ২৩ ডিসেম্বর দিবসে ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর কার্য্যাধ্যক্ষ জব চার্ণক বাঙ্গালার সুবাদারের সহিত বিবাদ করিয়া, হুগলীর কুঠী পরিত্যাগ পূর্ব্বক, ব্রাহ্মণী পত্নী সমভিব্যাহারে হুগলীর ১২ ক্রোশ দক্ষিণস্থিত গঙ্গাতীরবর্ত্তী সুতানুটী নামক গ্রামে আসিয়া এক নিম্ববৃক্ষতলে আপনার শিবির ও নূতন কুঠীর ভিত্তি স্থাপন করেন। তৎপরে চার্ণক কিছু দিনের জন্য সেখান হইতেও