পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/২২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

অষ্টম পরিচ্ছেদ।


বঙ্গে স্ত্রীশিক্ষার আয়োজন।

১৮৪৬—১৮৫৩ পর্য্যন্ত।

 ১৮৪৬ সালের ১লা জানুয়ারি মহাসমারোহ সহকারে কৃষ্ণনগর কালেজ খোলা হইল। কৃষ্ণনগরের পক্ষে সে দিন এক স্মরণীর দিন। সে সময়ে শ্রীশচন্দ্র নদীয়ার রাজপদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি এই নব-প্রতিষ্ঠিত কালেজের উৎসাহদাতা হইলেন। তৎপূর্ব্বে নদীয়ার রাজবংশের কোনও সন্তান সাধারণের সহিত এক সঙ্গে শিক্ষালাভ করে নাই। রাজারা নানা স্থান হইতে সুযোগ্য ওস্তাদ আনাইয়া স্বীয় পরিবারের বালকদিগের শিক্ষার ব্যবস্থা করিতেন। শ্রীশচন্দ্র সে নিয়মের ব্যতিক্রম করিয়া স্বীয় পুত্র সতীশচন্দ্রকে কালেজে পড়িতে দিবার সংকল্প করিলেন; এবং নিজে কালেজ কমিটীর একজন সভ্য হইলেন। কেবল যে নামমাত্র সভ্য হইলেন তাহা নহে, কমিটীর প্রত্যেক অধিবেশনে উপস্থিত থাকিয়া কার্য্য-নির্ব্বাহ বিষয়ে বিশেষ সহায়তা করিতে লাগিলেন।

 সুপ্রসিদ্ধ ডি, এল, রিচার্ডসন সাহেব কালেজের প্রথম অধ্যক্ষ হইয়া গমন করিলেন; এবং লাহিড়ী মহাশয় এক শত টাকা বেতনে দ্বিতীয় শিক্ষক নিযুক্ত হইয়া গেলেন। সে সময়ে যাঁহারা কৃষ্ণনগর কালেজে লাহিড়ী মহাশয়ের ছাত্র ছিলেন, তাঁহাদের মুখে যখন তাঁহার তৎকালীন উৎসাহ ও অনুরাগের কথা শুনি তখন চমৎকৃত হইয়া যাই। তিনি যখন পড়াইতে বসিতেন তখন দেখিলে বোধ হইত যেন পৃথিবীতে তাঁহার করিবার বা ভাবিবার অন্য কিছু নাই। সমগ্র দেহ-মন-প্রাণ তাহাতে ঢালিয়া দিতেন। তিনি স্বীয় কার্য্যে এমনি তন্ময় হইয়া যাইতেন যে এক এক দিন কালেজের অধ্যক্ষ বা হেড মাষ্টার তাঁহাকে কিছু বলিবার অভিপ্রায়ে তাঁহার ঘরে প্রবেশ কমিয়া পশ্চাতে আসিয়া দাঁড়াইয়া অবাক হইয়া তাঁহার পড়ান শুনিতেন; একটু অবসর পাইলে কথা কহিবেন বলিয়া অপেক্ষা করিতেন। তাঁহার পাঠনার রীতি এই ছিল যে কোনও পাঠ্য বিষয়ের প্রসঙ্গে কোনও জ্ঞানের কথা পাইলে তিনি সে সম্বন্ধে