পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/২২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮০
রামতনু লাহিড়ী তৎকালীন বঙ্গসমাজ।

 “বুদ্ধিমান ও বিদ্বান পণ্ডিতগণের মধ্যে যাহারা সরলচিত্ত তাঁহারা মহারাজের অভিপ্রায় শাস্ত্রসন্মত ও সর্ব্বজন-হিতকর বলিয়া স্বীকার করিলেন; কিন্তু দেশাচার ভয়ে জনসমাজে আপনাদের মত প্রকাশ করিতে বা তদনুযায়ী ব্যবস্থা দিতে সাহস করিতে পারিলেন না।”

 অনেকে হয় ত স্বভাবতঃ মনে করিবেন যে লাহিড়ী মহাশয় কৃষ্ণনগরে পদার্পণ করিয়াই ব্রজনাথ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ বেদান্তধর্ম্মাবলম্বী সংস্কারকদলের অগ্রণী হইলেন। কিন্তু তাহা নহে। ১৮৪৫ সালে, উমেশচন্দ্র সরকারের আন্দোলন উঠিলে, কলিকাতা ব্রাহ্মসমাজ একদিকে আপনার ধর্ম্মকে বেদান্তধর্ম্ম ও বেদকে অভ্রান্ত ঈশ্বর-বাণী বলিয়া ঘোষণা করিতে লাগিলেন, এবং অপর দিকে খ্রীষ্টীয়ধর্ম্মের প্রতি কটুক্তি বর্ষণ করিতে আরম্ভ করিলেন। এই উভয় কার্য্য-নীতিই সত্যানুরাগী ডিরোজিও-শিষাদলের চক্ষে নিন্দনীয় বোধ হইয়াছিল। লাহিড়ী মহাশয় ব্রাহ্মধর্ম্মাবলম্বিগণের মুখে বেদের অভ্রান্ততাবাদ কপটতা বলিয়া অনুভব করিতে লাগিলেন; এবং খ্রীষ্টীয়ধর্ম্মের নিন্দা অনুদারতা বলিয়া প্রতীতি করিলেন; সুতরাং তিনি বেদান্তধর্ম্মীদিগের সহিত সংযুক্ত হইলেন না। সংযুক্ত হওয়া দূরে থাক্ তাহাদের পত্রিকা “তত্ত্ববোধিনী” লইতেও স্বীকৃত হইলেন না; এবং তাহাদের মন্দিরের নির্মাণকার্য্যে বিশেষ সহায়তা করিলেন না। কেন তিনি ইহাদের প্রতি চটিয়াছিলেন তাহার কারণ উক্ত সময়ে ভক্তিভাজন রাজনারায়ণ বসু মহাশয়কে লিখিত পত্রের নিম্নলিখিত অংশ হইতে জানা যাইবে।

 ১৮৪৬ সালের ২৪ জুলাই কৃষ্ণনগর হইতে তিনি কলিকাতাতে রাজনারায়ণ বসু মহাশয়কে পত্র লিখিতেছেন। রাজনারায়ণ বাবু তখন হিন্দুকালেজ হইতে উত্তীর্ণ হইয়া ঐ বর্ষের প্রারম্ভে ব্রাহ্মধর্ম্মে বা তদানীন্তন বেদান্তধর্ম্মে দীক্ষিত হইয়া দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয়ের ভবনে গতায়াত করিতেছেন; এবং তত্ত্ববোধিনী পত্রিকাতে উপনিষদের ইংরাজী অনুবাদ কার্য্যে অক্ষয়কুমার দত্ত মহাশয়ের সহকারী হইবেন, এইরূপ প্রস্তাব চলিতেছে। রামগোপাল ঘোষ প্রমুখ ডিরোজিও শিষ্যদলের সহিত পূর্ব্ব হইতেই, যে রাজনারায়ণ বাবুর আলাপ পরিচয় ও আত্মীয়তা জন্মিয়ছিল তাহার প্রমাণ এই পত্রে পাওয়া যাইতেছে।

My DEAR RAJNARAIN,
 I cannot think much of the Vedantic movements here or elsewhere. The followers of Vedanta temporize. They do not