পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/২২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অষ্টম পরিচ্ছেদ।
১৮৫

সুবিজ্ঞ সুহৃদ্বয় কৃষ্ণনগরে আসিলেন। তদীয় প্রত্যর্থে তাঁহাকে লইয়া বাবু রামতনু লাহিড়ী, শ্রীপ্রসাদ লাহিড়ী, কালীচরণ লাহিড়ী, আরিণীচরণ রায়, বামাচরণ চৌধুরি প্রভৃতি দশ বার জন আত্মীয় ও আমি কৃষ্ণনগরের দেড়ক্রোশ পূর্ব্ব-দক্ষিণ আনন্দবাগ নামে উপবনে বনভোজন করিতে যাইলাম। তথা হইতে প্রত্যাগমনকালে নৌকায় নৌকায় আমাদের মধ্যে বিধবা-বিবাহের প্রস্তাব হইল। অনেকেই ইহার অনুকুল প্রতিজ্ঞাপত্রে স্বাক্ষর করিতে সম্মত হইলেন, কিন্তু কার্য্যকালে সকলেই স্থির-প্রতিজ্ঞ থাকিবেন, ইহা আমার বিশ্বাস হইল না। কয়েক দিবস পরে কৃষ্ণনগর কালেজগৃহে এবিষয়ের জন্য একটী সভা হইল। সভ্যগণের মধ্যে অধিকাংশ কালেজের ও স্কুলের ছাত্র।”

 “ষে দিবস আমরা আনন্দবাগে বনভোজন করি, তাহার পরদিন কোনও হিংস্ৰক ও দুরাচারী লোক আমার গ্রামস্থ অনেকের নিকট ব্যক্ত করিল যে, আমাদের বাটীর সন্নিহিত কোন স্থানে একটা গো-বৎসের মস্তক কতকগুলি ইষ্টকে আচ্ছাদিত রহিয়াছে ও মাথাটা দেখিয়াই বোধ হয় যেন তাহা অস্ত্র দ্বারা ছেদিত হইয়াছে। কিঞ্চিৎ পরে রটনা করিল যে কোনও ব্যক্তির এক গো-বৎস পাওয়া যাইতেছে না। পরদিবস কৃষ্ণনগরে কোন স্থানে বন্ধুলোকের সমাগম দেখিয়া গো-বৎস বৃত্তান্ত আরও কিঞ্চিৎ রঞ্জিত করিয়া কহিল যে, কেহ কেহ বলিতেছে যে, আনন্দবাগের বনভোজন জন্য এই গো-হত্যাটী হইয়াছে। নগর মধ্যে এই বিষয়ের তুমুল আন্দোলন হইতে লাগিল।”

 আমি কৃষ্ণনগরের সেকালের লোকের মুখে গুনিয়াছি ঐ গো-বৎস হত্যা বৃত্তান্তটা আনন্দবাগের বনভোজনের সহিত সংযুক্ত করিবার আরও একটা কারণ ছিল। যুবকদল বাস্তবিক একটা খাসী মরিয়াছিলেন, এবং তাহার দেহটা একটা বৃক্ষে ঝুলাইয়া রাখিয়াছিলেন। একজন লোক দূর হইতে দোদুল্যমান প্রাণিদেহটা দেখিয়া আসে ও নগরমধ্যে গো-বৎস হত্যা বিবরণ প্রচার করে, তারপর দেওয়ানজীর উল্লিখিত পূর্ব্বোক্ত ব্যক্তি তাহাতে সাক্ষ্যযোগ করে। উভয় সাক্ষো মিলাতে, লোকের বিশ্বাস জন্মিতে আর বিলম্ব হইল না। সকলেই, অনুমান করিতে পারেন, ইহাতে যুবকদলে প্রতি কি ঘোর নির্য্যাতন উপস্থিত হইল।

 অনুমান করি পূর্ব্বোক্ত গোহত্যার আন্দোলন ও বিধবা-বিবাহের সভা ১৮৫০ সালের অবসানে বা ১৮৫১ সালের প্রারস্তে ঘটিয়া থাকিবে এবং সেই

 ২৪