পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/২৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮৫
রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ।

আন্দোলনেই লাহিড়ী মহাশয়ের কৃষ্ণনগর বাস ক্লেশকর করিয়া তুলে। একদিকে সামাজিক নির্য্যাতন অপরদিকে বৃদ্ধ পিতা ও আত্মীয় স্বজনের মানসিক অশাস্তি এই উভয়বিধ কারণে তাঁহার চিত্তকে উদ্বিগ্ন করিল। ১৮৪৮ কি ১৮৪৯ সালে তাঁহার যে প্রথম পুত্রটা জন্মিয়াছিল, সেটী এই সময়ে একটা দুৰ্ঘটনা ঘটিয়া মারা গেল। ঘুমাইতে ঘুমাইতে খাট হইতে পড়িয়া মস্তকে আঘাত লাগিয়াছিল। ৩৪ দিবস নানা প্রকার চিকিৎসাতেও জ্ঞান হয় নাই; শেষে তাহার প্রাণ যায়। তাহাতে আত্মীয় স্বজন বিধাতার অভিসম্পাত বলিয়া তাঁহার বালিকা পত্নীকে অস্থির করিয়া তুলেন। এই সকল কারণে ১৮৫১ সালের মার্চ্চমাসে বদলীর প্রার্থনা করিয়া তিনি বৰ্দ্ধমানে বদলী হইয়া যান। পরবর্ত্তী এপ্রিলমাসে দেড়শত টাকা বেতনে হেডমাষ্টার হইয়া বৰ্দ্ধমানে গমন করেন। তাঁহার প্রিয় বন্ধু রসিককৃষ্ণ মল্লিক তখন বৰ্দ্ধমানে ডেপুটী কালেক্টরী কাজ করিতেছিলেন, তাহাও তাঁহার বৰ্দ্ধমানে বদলী হইবার অন্ততম কারণ হইয়া থাকিবে।

 যখন কৃষ্ণনগরে পূর্ব্বোক্ত ঘটনা সকল ঘটিতেছিল, তখন কলিকাতাতে একটা নুতন কার্য্যের সূত্রপাত হইতেছিল। এডুকেশন কাউন্সিলের সভাপতি ও গবর্ণর জেনেরালের মন্ত্রিসভার অন্ততম সভ্য মহাত্মা ড্রিঙ্কওয়াটার বীটন্‌ বা বেথুন এদেশে স্ত্রীশিক্ষা প্রবর্ত্তিত করিবার জন্য প্রয়াস পাইতেছিলেন। বীটন সাহেব ইংলণ্ডের স্যালফোর্ড নামক স্থান-নিবাসী কর্ণেল জন ড্রিঙ্কওয়াটারের জ্যেষ্ঠ পুত্র। কর্ণেল ডিস্কওয়াটার জিব্রাণ্টার দুর্গের অবরোধের ইতিবৃত্ত লিখিয়া প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছিলেন। বীটন যৌবনে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করিয়া র্যাংলারের সন্মানিত পদ অধিকার করেন। তৎপরে আইন অধ্যয়ন করিয়া পার্লিরামেণ্টের কাউন্সেলের পদ প্রাপ্ত হন। এই পদ হইতে তিনি গবর্ণর জেনেরালের ব্যবস্থা-সচিবরূপে এদেশে প্রেরিত হন। তিনি বড় মাতৃভক্ত লোক ছিলেন; এবং এইরূপ কথিত আছে যে, মাতৃভক্তিই তাঁহার স্ত্রীজাতির প্রতি শ্রদ্ধা ও ভারতীয় নারীগণের উন্নতি সাধনের ইচ্ছা সমুৎপন্ন করিয়াছিল।

 তিনি এডুকেশন কাউন্সিলের সভাপতিরূপে প্রতিষ্ঠিত হইয়াই তাঁহার স্বভাব-সুলভ সদাশয়তার দ্বারা প্রণোদিত হইয়া, এদেশীয়দিগের কল্যাণ সাধনে নিযুক্ত হইলেন। এই সময়ে স্বৰ্গীয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও মদনমোহন তর্কালঙ্কার প্রভৃতি পণ্ডিতগণের সহিত তাঁহার পরিচয় ও আত্মীয়তা জন্মে।