পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/২৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অষ্টম পরিচ্ছেদ।
১৮৯

লাগিল। কুমারী কুক দুই বৎসর এই ভাবে কাজ করিলেন। অবশেষে তিনি (Mr. Wilson) উইলসন নামক একজন মিশনারি সাহেবের সহিত প্ররিণীত হইলেন। বিবাহের পরেও তিনি স্ত্রীশিক্ষা বিস্তারে রত রহিলেন বটে, কিন্তু আর পূর্ব্বের ন্যায় সময় দিতে পারিতেন না। এই অভাব দূর করিবার জন্য কলিকাতার কতিপয় ভদ্র ইংরাজ-মহিলা সমবেত হইয়া তদানীন্তন গবর্ণর জেনেরাল লর্ড আমহার্ষ্টের পত্নী লেডী আমহার্ষ্টকে আপনাদের অধিনেত্রী করিয়া স্ত্রীশিক্ষার উন্নতি-বিধানার্থ বেঙ্গাল লেডীস্ সোসাইটী (Bengal Ladies' Society) নামে এক সভা স্থাপন করিলেন। এই সভার মহিলাসভ্যগণের উৎসাহে ও যত্নে নানা স্থানে বালিকা-বিদ্যালয় সকল স্থাপিত হইতে লাগিল। অল্পকালের মধ্যেই ইহার সহরের মধ্যস্থলে একটা প্রশস্ত স্কুলগৃহ নির্ম্মাণ করিবার সংকল্প করিলেন। কিছুকাল পরে মহিলাগণ মহাসমারোহে গৃহের ভিত্তি স্থাপন পূর্ব্বক গৃহনির্ম্মাণে প্রবৃত্ত হইলেন। ঐ গৃহ নির্ম্মাণকার্য্যের সাহায্যার্থ রাজা বৈদ্যনাথ বিংশতি সহস্র মুদ্রাদান করিয়াছিলেন। ইহাতেই প্রমাণ, স্ত্রী-শিক্ষা প্রচলন বিষয়ে মহিলাগণ এদেশীয় অনেক ভদ্রলোকের উৎসাহ ও আনুকুল্য প্রাপ্ত হইয়াছিলেন।

 বেঙ্গল লেডীস সোসাইটী বহুবৎসর জীবিত থাকিয়া কার্য্য করিয়াছিল। এমন কি ১৮৩৪ সালে এডাম সাহেব বঙ্গদেশের শিক্ষার অবস্থা বিষয়ে যে রিপোর্ট প্রদান করেন, তাহাতে কলিকাতা ব্যতীত শ্রীরামপুর, বৰ্দ্ধমান, কালনা, কাটোয়া, কৃষ্ণনগর, ঢাকা, বাখরগঞ্জ, চট্টগ্রাম, মুরশিদাবাদ ও বীরভূম, প্রভৃতি স্থানে ১৯টা বালিকাবিদ্যালয় ও প্রায় ৪৫০টা বালিকার উল্লেখ দেখা যায়; এবং ঐ সকল বিদ্যালয়ের অনেকগুলি লেডিস সোসাইটীর সভ্য মহোদয়াগণের উৎসাহে স্থাপিত বলিয়া উল্লিখিত হয়। কিন্তু এই সকল বালিকা-বিদ্যালয়ের অধিকাংশ খ্রীষ্টীয় মহিলাদিগের স্থাপিত ও খ্রীষ্টীয় ধর্ম্ম প্রচার কার্য্যের অঙ্গীভূত ছিল।

 সাম্প্রদায়িক-ধর্ম্ম-শিক্ষাবিহীন শিক্ষা দিবার উদ্দেশ্যে বালিকাবিদ্যালয় স্থাপন ধীটন্‌ সাহেব সর্ব্বপ্রথমে করেন। সে কার্য্যের প্রতিষ্ঠা ১৮৪৯ সালে হয়; তাহার বিবরণ অগ্রে দিয়াছি, বীটনের বালিকাবিদ্যালয় স্থাপিত হইলেই ৰাৱাসত, কৃষ্ণনগর প্রভৃতি মফঃস্বলের ও অনেক স্থানে ৰালিকা-বিদ্যালয় স্থাপিত হইতে লাগিল।

 এই স্ত্রী-শিক্ষার প্রচলন লইয়া কলিকাতার হিন্দুসমাজে মহা আন্দোলন