পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/২৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯০
রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ।

উপস্থিত হইল। মদনমোহন তর্কালঙ্কার স্ত্রী-শিক্ষার বৈধতা প্রমাণ করিবার জন্য যে কেবল গ্রন্থ রচনা করিলেন তাহা নহে, স্বীয় কন্যাকে নবপ্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ে ভর্ত্তি করিয়া দিলেন। তৎকালীন ব্রাহ্মসমাজের নেতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং রামগোপাল ঘোষ প্রভৃতি লাহিড়ী মহাশয়ের যৌবন-সুহৃদগণ স্বীয় স্বীয় ভবনের বালিকাদিগকে বিদ্যালয়ে পাঠাইতে লাগিলেন। স্ত্রীশিক্ষা লইয়া সমাজ মধ্যে নানা আলোচনা উপস্থিত হইল। “কন্যাপ্যেবং পালনীয়া শিক্ষণীয়াতিযত্নতঃ” মহানির্ব্বাণ তন্ত্রের এই বচনালঙ্কৃত নবপ্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ের গাড়ি যখন রাজপথে বাহির হইত, তখন লোকে হা করিয়া তাকাইয়া থাকিত ও নানা কথা কহিত; এবং সুকুমারমতি শিশু বালিকাদিগকে উদ্দেশ্ করিয়া কত অভদ্র কথাই কহিত। লোকে বলিতে লাগিল—”এইবার কলির বাকি যা ছিল হইয়া গেল! মেয়েগুলো কেতাব ধরলে আর কিছু বাকি থাকিবে না।” নাটুকে রামনারায়ণ রসিকতা করিয়া বাবুদের মজলিসে বলিতে লাগিলেন;—“বাপরে বাপ মেয়েছেলেকে লেখা পড়া শেখালে কি আর রক্ষা আছে! এক “আন” শিখাইয়াই রক্ষা নাই! চাল আন, ডাল আন, কাপড় আন, করিয়া অস্থির করে, অন্য অক্ষরগুলো শেখালে কি আর রক্ষা আছে!” লোকে শুনিয়া হা হা করিয়া এক গাল হাসিতে লাগিল। বঙ্গের রসিক কবি ঈশ্বর গুপ্তও ভবিষ্যদ্বাণী করিলেনঃ—

“যত ছুড়ীগুলো তুড়ী মেরে কেতাব হাতে নিচ্চে যবে,
এ বি শিখে, বিবী সেজে, বিলাতী বোল কবেই কবে;
আর কিছু দিন থাকরে ভাই! পাবেই পাবে দেখতে পাবে,
আপন হাতে হাঁকিয়ে বগী, গড়ের মাঠে হাওয়া খাবে।”

 বীটনের বালিকাবিদ্যালয় স্থাপিত হওয়াতে যেমন সমাজমধ্যে সমাজ সংস্কারের আন্দোলন উপস্থিত হইল এবং বীটন দেশীয় শিক্ষিতদলের প্রিয় হইলেন, তেমনি রাজনীতি বিষয়ে এক মহা আন্দোলন উঠিল তাহাতে তিনি তাঁহার স্বদেশীয়গণের অপ্রিয় হইয়া পড়িলেন। এই আন্দোলন অনেক পরিমাণে পরবর্ত্তী সময়ের ইলবার্টরিলের আন্দোলনের অনুরূপ ছিল। ঐ আন্দোলনের প্রকৃতি বুঝিবার নিমিত্ত পূর্ব্ব ইতিবৃত্তের কিঞ্চিৎ উল্লেখ আবশ্যক।

 ১৭৬৫ সাল হইতে বাঙ্গাল, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানী কার্য্যর ভার ইংরাজদিগের প্রতি অর্পিত হইলে, বহু বৎসর ধরিয়া ফৌজদারি কার্য‌্যের ভার মুসলমান নবাবের হস্তেই ছিল। ইহাতে