অক্ষয় কুমার দত্ত।
ইং ১৮২০ সালের ১লা শ্রাবণ দিবসে নবদ্বীপের সন্নিহিত চুপী নামক গ্রামে অক্ষয়কুমারের জন্ম হয়। ইঁহার পিতার নাম পীতাম্বর দত্ত। ইঁহার পিতা বিষয় কর্ম্মোপলক্ষে কলিকাতার দক্ষিণ উপনগরবর্ত্তী খিদিরপুর নামক স্থানে বাস করিতেন। অক্ষয়কুমার সপ্তম বর্ষ বয়সে গুরুমহাশয়ের পাঠশালাতে বিদ্যারম্ভ করেন। তৎপরে দশম বর্ষ বয়ঃক্রম কালে ইঁনি খিদিরপুরে নীত হন। সেখানে ইঁহার পিতা ও পিতৃব্যপুত্রগণ তৎকালপ্রচলিত রীতি অনুসারে ইঁহাকে পারসী ভাষাতে সুশিক্ষিত করিবার প্রয়াস পান। কিন্তু শিশু অক্ষয়কুমার সে বিষয়ে অমনোযোগী হইয়া ইংরাজী শিক্ষার জন্য অত্যধিক ব্যগ্রতা প্রকাশ করিতে লাগিলেন। ইহাতে তাঁহার অভিভাবকগণ প্রথমে কতিপয় ইংরাজী ভাষাভিজ্ঞ আত্মীয়কে অনুরোধ উপরোধ করিয়া উক্ত ভাষা শিক্ষা বিষয়ে তাঁহার সহায়তা করিতে প্রবৃত্ত করিলেন। তাহাতে তিনি আশানুরূপ শিক্ষা করিতে না পারিয়া দুঃখিত হইলেন। অমূল্য সময় চলিয়া যাইতে লাগিল, অথচ পাঠে অল্পই উন্নতি দৃষ্ট হইতে লাগিল। অবশেষে বালক অক্ষয়কুমার ইংরাজী বিদ্যালয়ে প্রবিষ্ট হইবার জন্য ছিঁড়িয়া পড়িলেন; এবং খিদিরপুরে খ্রীষ্টীয় মিশনারিদিগের একটি অবৈতনিক বিদ্যালয় স্থাপিত হইলে, গুরুজনের অনুমতির অপেক্ষা না করিয়াই, তাহাতে গিয়া ভর্ত্তি হইলেন। ইহাতে তাঁহার অভিভাবকগণ উৎকণ্ঠিত হইয়া তাঁহাকে কলিকাতাতে রাখিয়া গৌরমোহন আঢ্যের প্রতিষ্ঠিত “ওরিএণ্টাল সেমিনারি” নামক স্কুলে ভর্ত্তি করিবার বন্দোবস্ত করিলেন। তখন তাঁহার বয়ঃক্রম ১৬ বৎসর হইবে।
স্কুলে পদার্পণ করিয়াই দত্তজ মহাশয় শিক্ষা বিষয়ে আশ্চর্য অভিনিবেশ প্রদর্শন করিতে লাগিলেন। তাঁহার জ্ঞানের বুভুক্ষ যেন কিছুতেই মিটত না। স্কুলের পাঠ্যগ্রন্থ ভিন্ন যেখানে যে কিছু জ্ঞাতব্য বিষয় হাতে পাইতেন, অতৃপ্ত ক্ষুধার সহিত তাহার উপরে পড়িতেন, এবং তাহাকে অধিগত না করিয়া নিবৃত্ত হইতেন না।
পরিতাপের বিষয় এই, অচিরকালের মধ্যে পিতৃবিয়োগ হওয়াতে ইহাকে লেখা পড়া ছাড়িতে হইল। আড়াই বৎসর কি তিন বৎসরের অধিক কাল বিদ্যালয়ে থাকিতে পারেন নাই। তৎপরে একদিকে যেমন আরাধ্যা জননীদেবীর ভরণপোষণার্থে অর্থোপার্জ্জন চেষ্টা ও তজ্জনিত দারিদ্র্যের সহিত সংগ্রাম, অপর দিকে বন্ধু-বান্ধবের নিকট পুস্তকাদি সংগ্রহ করিয়া জ্ঞানোপার্জ্জন