পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/২৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অষ্টম পরিচ্ছেদ।
১৯৯

চেষ্টা, দুই এক সঙ্গে চলিল। বাস্তবিক কিরূপ ক্লেশে দিন যাপন করিয়া তিনি জ্ঞানোপার্জ্জন করিয়াছিলেন তাহা স্মরণ করিলে বিস্মিত হইতে হয়। এই সময়ে তিনি যে যে বিষয় শিক্ষা করিতে আরম্ভ করেন তন্মধ্যে সংস্কৃত ভাষা একটা। তিনি একাগ্রতার সহিত কতিপয় পণ্ডিতের নিকট পাঠ করিয়া সংস্কৃত ব্যাকরণে বিশেষ ব্যুৎপত্তি লাভ করিয়াছিলেন।

 তৎপরে কিছুদিন বহু দারিদ্র্যভোগ করিয়া ১৮৪০ সালে তত্ত্ববোধিনী সভা কর্তৃক স্থাপিত তত্ত্ববোধিনী পাঠশালাতে ভূগোল ও পদার্থবিদ্যার শিক্ষকতা কার্য্য লাভ করেন। কবিবর ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত তাঁহাকে সঙ্গে করিয়া তত্ত্ববোধিনী-সভার অধিবেশনে লইয়া যান এবং তাঁহারই উৎসাহে তিনি উক্ত সভার সভ্যশ্রেণীভুক্ত হইয়াছিলেন। তত্ত্ববোধিনী পাঠশালায় শিক্ষকরূপে তিনি প্রথম মাসে ৮৲ তৃতীয় মাসে ১০৲ ও তৎপরে ১৪৲ টাকা করিয়া মাসিক বেতন পাইতেন। তদনন্তর ১৮৪৩ সালে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা প্রকাশিত হইলে ইনি তাহার সম্পাদক নিযুক্ত হন। এই তত্ত্ববোধিনীর সংশ্রবই তাঁহার সর্ববিধ উন্নতির মূল কারণ হইল। এতদ্বারা এক দিকে যেমন তাঁহার আয় বৃদ্ধি হইল, অপর দিকে তেমনি প্রশস্ত জ্ঞানের দ্বার তাহার নিকটে উন্মুক্ত হইল। এই সময়ে তিনি কিছুদিন মেডিকেল কালেজে অতিরিক্ত ছাত্ররূপে অধ্যয়ন করিয়া উদ্ভিদবিদ্যা, প্রাণিতত্ত্ববিদ্যা, রসায়নবিদ্যা, প্রাকৃতিকবিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ে অনেক জ্ঞানলাভ করিয়াছিলেন। তদ্ভিন্ন তিনি তত্ত্ববোধিনী সভার সাহায্যে ভূরি ভূরি জ্ঞানগর্ভ গ্রন্থ সংগ্রহ করিয়া পাঠ করিতে লাগিলেন। তত্ত্ববোধিনীর সম্পাদন ভার গ্রহণ করাতে যে মানুষ যে কার্যোর উপযোগী যেন তাহার হস্তে সেই কার্য্যই আসিল। তিনি পদোন্নতিও ধনাগমের বাসনা পরিত্যাগ পূর্ব্বক নিজের ও দেশীয়গণের জ্ঞানোন্নতি সাধনে দেহ মন নিয়োগ করিলেন। তত্ত্ববোধিনী বঙ্গদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ পত্রিকা হইয়া দাঁড়াইল। তৎপূর্ব্বে বঙ্গসাহিত্যের, বিশেষতঃদেশীয় সংবাদপত্র সকলের অবস্থা কি ছিল, এবং অক্ষয়কুমার দত্ত সেই সাহিত্য-জগতে কি পরিবর্ত্তন ঘটাইয়াছিলেন তাহা স্মরণ করিলে, তাঁহাকে দেশের মহোপকারী বন্ধু না বলিয়া থাকা যায় না। “রসরাজ”, “যেমন কর্ম্ম তেমনি ফল” প্রভৃতি অশ্লীলভাষী কাগজগুলি ছাড়িয়া দিলেও “প্রভাকর” ও “ভাস্করের” ন্যায় ভদ্র ও শিক্ষিত সমাজের জন্য লিখিত পত্র সকলেও এমন সকল ব্রীড়াজনক বিষয় বাহির হইত, বাহা ভদ্রলোকে ভদ্রলোকের নিকট পাঠ করিতে