পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/২৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নবম পরিচ্ছদ।
২০৯

বড়বাজারের ভাগবতচরণ সিংহের ভবনে পিতার সহিত বাস করিতে আরম্ভ করেন। পিতাপুত্রে রন্ধন করিয়া খাইতেন। অতি কষ্টে দিন যাইত। এই সময়ে ভাগবতচরণ সিংহের কনিষ্ঠা কন্যা রাইমণি তাঁহাকে পুত্রাধিক যত্ন করিতেন। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের কোমল হৃদয় কোনও দিন সে উপকার বিস্মৃত হয় নাই। বৃদ্ধবয়সেও রাইমণির কথা বলিতে দর দর বারে তাঁহার চক্ষে জলধারা বহিত।

 কলিকাতাতে আসিয়া কয়েক মাস পাঠশালে পড়িবার পর, বিদ্যাসাগর মহাশয়েয় পিতা তাহাকে কলিকাতা সংস্কৃত কলেজে ভর্তি করিয়া দেন। কালেজে পদার্পণ করিবামাত্র তাঁহার অসাধারণ প্রতিভা শিক্ষক ও ছাত্র সকলের গোচর হইল। ১৮২৯ সালের জুন মাসে তিনি ভর্ত্তি হইলেন, ছয় মাসের মধ্যেই মাসিক ৫৲ টাকা বৃত্তি প্রাপ্ত হইলেন। সেই বৃত্তি সহায় করিয়া তিনি অধ্যয়ন করিতে লাগিলেন। ক্রমে কালেজের সমুদয় উচ্চবৃত্তি ও পুরস্কার লাভ করিলেন। সে সময়ে মফস্বলের ইংরাজ জজদিগের আদালতে এক একজন জজ-পণ্ডিত থাকিতেন। হিন্দু ধর্ম্মশাস্ত্র অনুসারে ব্যবস্থা দেওয়া তাহাদের কার্য্য ছিল। সংস্কৃত কালেজের উত্তীর্ণ ছাত্রগণ ঐ কাজ প্রাপ্ত হইতেন। তাহা একটা প্রলোভনের বিষয় ছিল। কিন্তু উক্ত কর্ম্মপ্রার্থীদিগকে ল কমিটী নামক একটী কমিটীর নিকট পরীক্ষা দিয়া কর্ম্ম লইতে হইত। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বয়ঃক্রম যখন ১৭ বৎসরের অধিক হইবে না, তখন ল কমিটীর পরীক্ষাতে উত্তীর্ণ হইয়া ত্রিপুরার জজ-পণ্ডিতের কর্ম্ম প্রাপ্ত হন; কিন্তু পিতা ঠাকুরদাস এত দূরে যাইতে দিলেন না।

 ১৮৪১ সালে তিনি কালেজ হইতে উত্তীর্ণ হইয়া বিদ্যাসাগর উপাধি পাইয়া ফোর্ট উইলিয়াম কালেজের প্রধান পণ্ডিতের পদ প্রাপ্ত হন। এই পদ প্রাপ্ত হওয়ার পর তিনি বাড়ীতে বসিয়া ইংরাজী শিখিতে আরম্ভ করেন। বিদ্যাসাগর মহাশয়কে সকলে সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত বলিয়াই জানেন, কিন্তু তিনি ইংরাজীতে কিরূপ অভিজ্ঞ ছিলেন, কি সুন্দর ইংরাজী লিখিতে পারিতেন, তাহা অনেকে জানেন না; এমন কি তাঁহার হাতের ইংরাজী লেখাটীও এমন সুন্দর ছিল যে, অনেক উন্নত উপাধিধারী ইংরাজীওয়ালাদের হাতের লেখাও তেমন সুন্দর নয়। এ সমুদয় তিনি নিজ চেষ্টা যত্নে করিয়াছিলেন। তাঁহার আত্মোন্নতি সাধনের ইচ্ছা এরূপ প্রবল ছিল যে তাঁহার

 ২৭