সন্নিহিত কউগাছি গ্রামে আসিয়া বাস করেন। সেখানে রাজভবনের গড় এখনও বিদ্যমান। ক্রমে বর্গীরা পূর্ব্বপারেও পদার্পণ করিতে আরম্ভ করে। তখন কলিকাতার চারিদিকে “মারহাট্টা ডিচ্” নামক পরিখা খনন করা হয়। সেই সময়ে নদীয়াপতি কৃষ্ণচন্দ্র কোনও নিরাপদ স্থানে বাস করিবার অভিপ্রায়ে কৃষ্ণনগরের ছয় ক্রোশ উত্তরে একটী স্থান মনোনীত করিয়া, সেখানে রাজধানী স্থাপন করেন; এবং তাঁহার জ্যেষ্ঠপুত্র শিবচন্দ্রের নামে তাহার নাম শিবনিবাস রাখেন। ঐ নগরকে তিনি রাজপ্রাসাদ, দেবমন্দির ও আত্মীয় কুটুম্বের বাসভবনে পূর্ণ করিয়াছিলেন। “শিবনিবাসের দক্ষিণ দিকে কৃষ্ণপুর নামক এক গ্রাম পত্তন করিয়া তথায় বহুসংখ্যক গোপজাতির বসতি করান। তাহারা রাজসরকারে নানাবিধ কার্য্য করিত। এক্ষণে তাহারা কৃষ্ণপুরে গোড়ো বলিয়া খ্যাত।” নগরের এক ক্রোশ পূর্ব্ব উত্তরে ইচ্ছামতী নদীতীরে এক গঞ্জ স্থাপন করেন এবং তাহার নাম কৃষ্ণগঞ্জ রাখেন। ঐ গঞ্জের নিকটস্থ গ্রামও কৃষ্ণগঞ্জ বলিয়া খ্যাত।
কৃষ্ণচন্দ্রের অধিকারের মধ্যকালে নবাব আলিবর্দ্দী খাঁ পরলোক গমন করেন; এবং তাঁহার দৌহিত্র বিখ্যাত সিরাজদ্দৌলা বাঙ্গালার সিংহাসনে আরোহণ করেন। সিরাজদ্দৌলা সুখপ্রিয় তরলমতি অব্যবস্থিত-চিত্ত লোক ছিলেন। তাঁহার রাজত্বকালে তাঁহার বিবিধ অত্যাচারে রাজ্যের প্রধান প্রধান ব্যক্তিগণ উত্ত্যক্ত হইয়া উঠিলেন; এবং কিরূপে তাঁহাকে সিংহাসনচ্যুত করিয়া যোগ্যতর কোনও ব্যক্তির হস্তে রাজ্যভার অর্পণ করিতে পারেন এই মন্ত্রণা করিতে লাগিলেন। মুর্শিদাবাদবাসী জগৎশেঠ নামক একজন ধনবান ব্যক্তির ভবনে এই মন্ত্রণা-সভার অধিবেশন হইতে লাগিল। এইরূপ জনশ্রুতি যে রাজা মহেন্দ্র, রাজা রাম নারায়ণ, রাজা রাজবল্লভ, রাজা কৃষ্ণদাস, মীরজাফর প্রভৃতি প্রথমে এই মন্ত্রণার মধ্যে ছিলেন। তাঁহাদের দ্বারা আহুত হইয়া কৃষ্ণচন্দ্র পরে আসিয়া তাহাতে যোগ দেন; এবং তাঁহারই পরামর্শক্রমে ইংরাজদিগের সাহায্য প্রার্থনা করা স্থিরীকৃত হয়। কোনও কোনও ইতিহাস লেখক এই কথার প্রতিবাদ করিয়াছেন। তাঁহারা বলেন কৃষ্ণচন্দ্রের এই মন্ত্রণা সভার সহিত যোগ ছিল না। কিন্তু ক্ষিতীশবংশাবলীচরিত-লেখক বলিয়াছেন কৃষ্ণনগরের রাজবাটীতে এ প্রবাদ চলিত আছে, যে পলাশীর যুদ্ধের পর ক্লাইব সাহেব কৃষ্ণচন্দ্রকৃত সাহায্যের প্রতিদানস্বরূপ তাঁহাকে পাঁচটি কামান উপহার দিয়াছিলেন। সে পাঁচটী কামান অদ্যাপি কৃষ্ণনগরের রাজবাটীতে বিদ্যমান আছে।