পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/২৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নবম পরিচ্ছেদ।
২১১

অধ্যক্ষের পদে প্রতিষ্ঠিত হইয়াই তিনি নানা প্রকার সংস্কার কার্য্যে হস্তার্পণ করেন। প্রথম, প্রাচীন সংস্কৃত পুস্তকগুলির রক্ষণ ও মুদ্রণ; (২য়) ব্রাহ্মণ ও বৈদ্য ব্যতীত অন্য জাতির ছাত্রগণের জন্য কালেজের দ্বারা উদ্ঘাটন; (৩য়) ছাত্রদিগের বেতন গ্রহণের রীতি প্রবর্ত্তন, (৪র্থ) উপক্রমণিকা, ঋজুপাঠ প্রভৃতি সংস্কৃত শিক্ষার উপযোগী গ্রন্থাদি প্রণয়ন, (৫ম) ২ মাস গ্রীষ্মাবকাশ প্রথা প্রবর্ত্তন (৬ষ্ঠ) সংস্কৃতের সহিত ইংরাজী শিক্ষা প্রচলন। সংস্কৃত কালেজের শিক্ষা প্রণালীর মধ্যে এই সকল পরিবর্ত্তন সংঘটন করিতে বিদ্যাসাগর মহাশয়কে যে কত চিন্তা ও কত শ্রম করিতে হইয়াছিল তাহা আমরা এখন কল্পনা করিতে পারি না। সে কালের লোকের মুখে তাঁহার শ্রমের কথা যাহা শুনিয়াছি, তাহা শুনিলে আশ্চর্যাম্বিত হইতে হয়।”

 ইহার পর দিন দিন তাঁহার পদবৃদ্ধি ও খ্যাতি প্রতিপত্তি বাড়িতে লাগিল। পূর্ব্বেই বলিয়াছি ১৮৪৭ সালে তাঁহার “বেতাল পঞ্চবিংশতি” মুদ্রিত ও প্রচারিত হয়। “বেতাল” বঙ্গসাহিত্যে এক নবযুগের সূত্রপাত করিল। তৎপরে ১৮৪৮ সালে “বাঙ্গালার ইতিহাস” ১৮৫০ সালে “জীবনচরিত” ১৮৫১ সালে “বোধোদয়” ও “উপক্রমণিকা,” ১৮৫৫ সালে “শকুন্তলা” ও “বিধবাবিবাহ বিষয়ক প্রস্তাব” প্রকাশিত হইল। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের নাম আবাল বৃদ্ধ বনিতা সকলের নিকট পরিচিত হইল।

 শিক্ষাবিভাগে ইনস্পেক্টারের পদ সৃষ্ট হইলে বিদ্যাসাগর মহাশয় সংস্কৃত কালেজের অধ্যক্ষের পদের উপরে, নদীয়া, হুগলি, বর্দ্ধমান ও মেদিনীপুরের ইনস্পেক্টারের পদ প্রাপ্ত হন। এক দিকে যখন তাঁহার পদ ও শ্রম বাড়িল, তখন অপর দিকে তিনি এক মহাব্রতে আত্মসমর্পণ করিলেন। সেই সালেই বিধবা-বিবাহ হিন্দুশাস্ত্রানুমোদিত ইহা প্রমাণ করিবার জন্য গ্রন্থ প্রচার করিলেন। বঙ্গদেশে আগুন জলিয়া উঠিল। কিন্তু সমাজসংস্কারে এই তাঁহার প্রথম হস্তক্ষেপ নয়। ১৮৪৯ সালে মে মাসে বেথুন সাহেৱ যখন বালিকাবিদ্যালয় স্থাপন করেন, তখন বিদ্যাসাগর মহাশয় তাঁহার প্রথম সম্পাদক নিযুক্ত হন। তিনি ও তাঁহার বন্ধু মদনমোহন তর্কালঙ্কার বেথুনের পৃষ্ঠপোষক হইয়া দেশে স্ত্রীশিক্ষা প্রচলন কার্য্যে আপনাদের দেহ মন প্রাণ সমর্পণ করেন।

 ১৮৫৬ সাল বিদ্যাসাগর মহাশয়ের জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ কাল। এই বৎসরে তাঁহার কার্য্যপটুতা যে কত তাহা জানিতে পারা গেল। এক