পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/২৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২১২
রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ।

দিকে বিধবাবিবাহের প্রতিপক্ষগণের আপত্তিখগুনার্থ পুস্তক প্রণয়ন, বিধবাবিবাহ প্রচলনার্থ রাজবিধি প্রণয়ণের চেষ্টা, কার্যতঃ বিধবাবিবাহ দিবার আয়োজন, এই সকলে তাঁহাকে ব্যাপৃত হইতে হইল; অপরদিকে এই সময়েই শিক্ষাবিভাগের নব-নিযুক্ত ডিরেক্টার মিষ্টার গর্ডন ইয়ংএর সহিত তাঁহার ঘোরতর বিবাদ বাঁধিয়া গেল। এই বিবাদ প্রথমে জেলায় জেলায় বালিকাবিদ্যালয় স্থাপন লইয়া ঘটে। বিদ্যাসাগর মহাশয় নদীয়া, হুগলী, বৰ্দ্ধমান ও মেদিনীপুর এই কয় জেলার স্কুল ইনস্পেক্টরের পদ প্রাপ্ত হইলেই নানা স্থানে বালকদিগের শিক্ষার জন্য বিদ্যালয় স্থাপনের সঙ্গে সঙ্গে বালিকাবিদ্যালয় স্থাপনে প্রবৃত্ত হইলেন। তিনি মনে করিলেন এদেশে স্ত্রীশিক্ষা প্রচলনের জন্য তাঁহার যে আস্তরিক ইচ্ছা ছিল, তাহা কিয়ৎপরিমাণে কার্য্যে পরিণত করিবার সময় ও সুবিধা উপস্থিত। তিনি উৎসাহেব সহিত তাঁহার সংকল্প সাধনে অগ্রসর হইলেন। কিন্তু ইয়ং সাহেব, বালিকাবিদ্যালয় স্থাপনের জন্য গবর্ণমেণ্টের অর্থ ব্যয় করিতে অস্বীকৃত হইয়া, বিদ্যাসাগর মহাশয়ের প্রেরিত বিল স্বাক্ষর করিলেন না। এই সংকটে বিদ্যাসাগর মহাশয় লেপ্টনাণ্ট গভর্ণরের শরণাপন্ন হইলেন। সে যাত্রা তাঁহার মুখ রক্ষ হইল বটে, কিন্তু ডিরেক্টার তাঁহার প্রতি হাড়ে চটিয়া রহিলেন। কথায় কথায় মতভেদ ও বিবাদ হইতে লাগিল। এই বিবাদ ও উত্তেজনাতে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের চিত্ত এই বৎসরের অধিকাংশ সময় অতিশয় আন্দোলিত ছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষের বিবিধ চেষ্টাসত্ত্বেও এই বিবাদের মীমাংসা না হওয়ায় অবশেষে ১৮৫৮ সালে তাঁহাকে কর্ম্ম পরিত্যাগ করিতে হয়।

 এদিকে ১৮৫৬ সালের অগ্রহায়ণ মাসে তাঁহার অন্যতম বন্ধু শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন মহাশয় এক বিধবার পাণিগ্রহণ করিলেন। তাহাতে বঙ্গদেশে যে আন্দোলন উঠিল, তাহার অনুরূপ জাতীয় উত্তেজনা আমরা অল্পই দেখিয়াছি। ইতিপূর্ব্বে শাস্ত্রানুসারে বিধবাবিবাহের বৈধতা লইয়া যে বিচার চলিতেছিল তাহা পণ্ডিত ও শিক্ষিত ব্যক্তিদিগের মধ্যেই বদ্ধ ছিল। রাজবিধিপ্রণয়নের চেষ্টা আরম্ভ হইলে, সেই আন্দোলন কিঞ্চিৎ পাকিয়া উঠিয়াছিল; কিন্তু বিদ্যাসাগর মহাশয় শাস্ত্রীয় বিচারে সন্তুষ্ট না থাকিয়া যখন কার্যতঃ বিধবাবিবাহ প্রচলনে প্রবৃত্ত হইলেন, তখন আপামর সাধারণ সকল লোকে একেবারে জাগিয়া উঠিল। পথে, ঘাটে, হাটে বাজারে, মহিলাগোষ্ঠীতে এই কথা চলিল।