পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/২৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২০
রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ।

রূপ শোনা যায়, এই সময়ে পাঁচ মাস কালের মধ্যে ৫৭ খানি বান্ধাই এডিনবরা রিভিউ, দুই তিন বার পড়িয়া হৃদগত করিয়াছিলেন।

 হরিশ একদিকে যেমন পড়িতেন, অপরদিকে তৎকাল প্রচলিত ইংরাজী সাময়িক পত্রে মধ্যে মধ্যে লিখিতেন। সে সময়ে হিন্দুকালেজের পুর্ব্বতন ছাত্র কাশীপ্রসাদ ঘোষ Hindu Intelligencer নাম এক ইংরাজী কাগজ সম্পাদন করিতেন, তাহাতে হরিশের লিখিত প্রবন্ধাদি সর্ব্বদা বাহির হইত। এই লেখার জন্য শিক্ষিত দলে তিনি সুপরিচিত হইয়া পড়িলেন। তিনি ২৫৲ টাকার কর্ম্মে প্রবেশ করিয়াছিলেন, ক্রমে ক্রমে বাড়িয়া তাঁহার বেতন ৪০০৲ চারি শত টাকা হইয়াছিল। তিনি মৃত্যুকাল পর্যন্ত, ঐ কর্ম্মে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন।

 ১৮৫২ সালে হরিশের মান সন্ত্রম এমন হইয়াছিল যে অপরাপর সভ্যগণের আগ্রহে এই সালে তিনি ব্রিটিশ ইণ্ডিয়ান সভার সভ্যপদে প্রবেশ করেন। প্রবেশ করিয়াই তিনি আইন, আদালত, রাজনীতি প্রভৃতির মর্ম্ম অবগত হইবার জন্য এমনি মনোনিবেশ করিলেন যে, ত্বরায় তিনি ঐ এসোসিএশনের পরামর্শদাতৃগণের মধ্যে একজন অগ্রগণ্য ব্যক্তি হইয়া উঠিলেন। একদিকে যেমন রাজনীতি সম্বন্ধে দেশের সর্ব্ববিধ হিতকর বিষয়ে তিনি পরামর্শদাতা ও সহায় হইলেন, তেমনি অপরদিকে কতিপয় বন্ধুর সহিত সমবেত হইয়া তাঁহার বাসভূমি ভবানীপুরে একটা ব্রাহ্মসমাজ স্থাপন করিলেন। তিনি ঐ সমাজের একজন উৎসাহী সভ্য ও সম্পাদক ছিলেন। তিনিই সর্ব্বাগ্রে ব্রাহ্মধর্ম্ম প্রচারার্থে ইংরাজী বক্তৃতার প্রথা প্রবর্ত্তিত করেন। এই সময়ে তাঁহার প্রদত্ত কতকগুলি বক্তৃতা মুদ্রিত হইয়াছে।

 এই সকল দেশহিতকর কার্য্যের মধ্যে অনুমান ১৮৫৩ সালে মধুসূদন রায় নামক একজন স্বদেশ-হিতৈষী ধনী ব্যক্তি একটা মুদ্রাযন্ত্র ক্রয় করিয়া একখানি সাপ্তাহিক ইংরাজী সংবাদপত্র বাহির করিবার অভিপ্রায় করিলেন। তিনিই “হিন্দু পেট্রিয়ট” বাহির করিয়া কিছুদিন অপরের দ্বারা চালাইয়া পরে হরিশ চন্দ্রকে তাঁহার সম্পাদক নিযুক্ত করেন। হরিশ মনের মত একটা কাজ পাইয়া, ঐ পত্রিকা সম্পাদনে দেহ মন নিয়োগ করিলেন। কিন্তু তখন ইংরাজী সংবাদপত্র পড়িবার লোক অল্পই ছিল; সুতরাং অনেক চেষ্টা করিয়াও হিন্দু পেট্রিয়টের গ্রাহক এক শতের অধিক হইল না। এই অবস্থাতে কিছুদিন পেট্রিয়ট চালাইয়া মধুসূদন রায় নিজপ্রেস অপরকে বিক্রয় করিয়া “পেট্রিয়ট” হরিশ চন্দ্রকে দিয়া পশ্চিম যাত্রা করিলেন।