পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/২৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নবম পরিচ্ছেদ।
২২১

 হরিশ কাগজ ভবানীপুরে তুলিয়া লইয়া গেলেন। এখানে আসিয়া তাঁহার ভ্রাতা হারাণ চন্দ্রকে নামতঃ প্রেস ও কাগজের সত্ত্বাধিকারী করিয়া উৎসাহসহকারে কাগজ চালাইতে লাগিলেন। তাঁহার বিদ্যা বুদ্ধি ও বিচক্ষণতার গুণে পেট্রিয়ট কিরূপ শক্তিশালী হইয়া উঠিয়াছিল তাঁহার বিবরণ অগ্রেই দিয়াছি। সিপাহী বিদ্রোহ উপস্থিত হইলে পেটিয়টের শক্তি অদ্বিতীয় হইয়া উঠিল।

 হরিশের যে লেখনী লর্ড ডালহউসির অযোধ্যাধিকারের সময়ে অগ্নি উদ্গীরণ করিয়াছিল, তাহাই মিউটিনীর সময়ে ক্যানিংএর পৃষ্ঠপোষক হইয়শান্তিস্থাপনের প্রয়াস পাইয়াছিল। সেই লেখনী আবার নীলকরদিগের অত্যাচার নিবারণার্থ সশস্ত্র হইয়া দাঁড়াইল। নীলকর-অত্যাচার-নিবারণ হরিশের এক অক্ষয় কীর্ত্তি। এই কার্য্যে তিনি দেহ, মন, অর্থ, সামর্থ্য লকলি নিয়োগ করিয়াছিলেন। নীলকর হাঙ্গামার সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত এইঃ—

 বিগত শতাব্দীর প্রারম্ভ হইতেই যশোহর, নদীয়া, পাবনা প্রভৃতি নানা জেলাতে নীলের চাষ আরম্ভ হয়। ইংরাজগণ কোম্পানি করিয়া নীলের চাষ আরম্ভ করেন। অল্প রায়ে অধিক লাভ করা তাঁহাদের উদ্দেশ্য ছিল; সুতরাং তাঁহারা তাহার নানা প্রকার উপায় অবলম্বন করিয়াছিলেন। তন্মধ্যে দাদন দেওয়া একটা প্রধান। দাদনের অর্থ কুষীদিগকে অগ্রিম অর্থ দেওয়া। দরিদ্র কৃষকগণ অগ্রিম অর্থ পাইলে আরও অনেক কাজে লাগাইতে পারিবে বলিয়া দাদন হইত; এবং ভাল ভাল জমিতে নীল বুনিবে এবং অপরাপর প্রকারে নীলকরদিগের সাহায্য করিবে বলিয়া প্রতিশ্রুত থাকিত। তৎপরে তাহারা নীলকরদিগের দাসরূপে পরিণত হইত। নীলকরগণ জোর করিয়া উৎকৃষ্ট জমিতে নীল বুনাইয়া লইতেন; বলপূর্ব্বক তাহাদিগের গোলাঙ্গলাদি ব্যবহার করিতেন; তাহাদের আদেশানুসারে কার্য্য করিতে না চাহিলে প্রহার, কয়েদ, গৃহদা প্রভৃতি নৃশংস অত্যাচার করিতেন; এবং অনেক স্থলে জমিদার হইয়া বসিয়া অবাধ্য প্রমাদিগকে একেবারে ধনে প্রাণে সারা করিতেন।

 কয়েক বৎসরের মধ্যে এই সকল, অত্যাচার এতই অসহ্য হইয়া উঠিয়াছিল যে, গবর্ণমেণ্ট উপদ্রব নিবারণের উদ্দেশ্যে নুতন আইন করিতে বাধ্য হইলেন। কিন্তু তাহাতে বিবাদ পাকিয়া গেল। অবশেষে অনুমান ১৮৫৮ কি ৫৯ সালে লক্ষ লক্ষ প্রজা ধর্ম্মঘট করিয়া প্রতিজ্ঞারূঢ় হইল যে নীলের দাদন লইবে না, বা নীলের চাষ করিবে না। তখন নীলকর