পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/২৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩০
রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ।

লোকের দৃষ্টিকে আকর্ষণ করিল। দেখিতে দেখিতে ইহার গ্রাহক ও লেখক সংখ্যা বর্দ্ধিত হইতে লাগিল। ঈশ্বরচন্দ্র দেশের অগ্রগণ্য ব্যক্তিদিগের মধ্যে একজন হইয়া দাঁড়াইলেন। পূর্বেই উক্ত হইয়াছে সুপ্রসিদ্ধ অক্ষয়কুমার দত্তের উৎসাহদাতাদিগের মধ্যে তিনি একজন প্রধান ব্যক্তি ছিলেন। অক্ষয়বাবু ইংরাজী পত্রিকাদি হইতে সংবাদ সংগ্রহ করিয়া দিতেন। ঈশ্বরচন্দ্রই তাঁহাকে তত্ত্ববোধিনী সভায় সভ্য হইতে প্ররোচনা করেন; এবং তিনিই দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয়ের সহিত তাঁহাকে পরিচিত করিয়া দেন। বলিতে গেলে উত্তরকালে অক্ষয়কুমার দত্ত যে প্রতিষ্ঠা লাভ করিয়াছিলেন, ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তই তাঁহার ভিত্তি স্থাপন করেন। কেবল তত্ত্ববোধিনী সভা নহে, ঈশ্বরচন্দ্র তৎকালের অনেক সভা সমিতির সহিত সংযুক্ত ছিলেন; এবং বক্তৃতাদি করিয়া সকলকে উৎসাহিত করিতেন।

 তৎপরে ১২৩৯ সালে যোগেন্দ্রমোহন ঠাকুরের কাল হওয়াতে “প্রভাকর” কিছুকালের জন্য উঠিয়া যায়। কিন্তু ঐ সালেই আন্দুলের জমীদার জগন্নাথ প্রসাদ মল্লিক মহাশয়ের উদ্যোগে “রত্নাবলী” নামে একথানি পত্রিকা প্রকাশিত হয়। মহেশ্চন্দ্র পাল নামক এক ব্যক্তি নামতঃ তাঁহার সম্পাদক ছিলেন; কিন্তু লিপিকার্য্যে তাঁহার পারদর্শিতা না থাকাতে ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত মহাশয়কেই সম্পাদকতা কার্যো বিশেষ সহায়তা করিতে হইত। কিন্তু একার্য্যে তিনি অধিক দিন থাকিতে পারেন নাই। কিছুদেিনর মধ্যেই স্বাস্থ্যের হানি নিবন্ধন সকল কার্য্য হইতে অবসৃত হইয়া কটকে তাঁহার পিতৃব্য শ্যামামোহন রায় মহাশয়ের আবাসে গিয়া কিছুদিন অবস্থিতি করেন। সেখানে একজন দণ্ডীর নিকট তন্ত্রশাস্ত্র পাঠ করিয়া তাহা বাঙ্গাল কবিতাতে অনুবাদ করিতে প্রবৃত্ত হন। বাঙ্গালা ১২৪৩ সালের বৈশাখ মাসে ঈশ্বরচন্দ্র কটক হইতে প্রতিনিবৃত্ত হইয়া আবার প্রভাকরকে পুনরুর্জ্জীবিত করেন। তখন প্রভাকর সপ্তাহে তিন বার প্রকাশিত হইতে লাগিল। ১৮৪৫ সালের আষাঢ় মাস হইতে তাহা দৈনিক রূপে পরিণত হয়। এইবারে ঈশ্বরচন্দ্র অনেক পণ্ডিত ও সুলেখক ব্যক্তিকে স্বীয় কার্য্যের সহায়তার জন্য ব্রতী করিলেন। তন্মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগণার চাঙ্গড়িপোতা গ্রামনিবাসী হরচন্দ্র ন্যায়রত্ন মহাশয় একজন প্রধান সহায় ছিলেন। ইনি “সোমপ্রকাশের” জন্মদাতা খ্যাতনামা দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ মহাশয়ের পিতা ও আমার মাতামহ।

 এখন হইতে “প্রভাকর” উদীয়মান রবিয় ন্যায় দিন দিন শ্রীবৃদ্ধি-সম্পন্ন