পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/২৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নবম পরিচ্ছেদ।
২৩৩

মধুসূদনের পিতামাতা পুত্রকে তাহা দিতে কখনই কৃপণতা করিতেন না। মধুসূদন প্রথমে সাগরদাঁড়ীতে জননীর নিকট থাকিয়া পাঠশালাতে, বিদ্যা শিক্ষা আরম্ভ করেন। ১২। ১৩ বৎসর বয়সে তাঁহার পিতা তাঁহাকে নিজের খিদিরপুরের বাটীতে আনিয়া হিন্দুকালেজে ভর্তি করিয়া দেন। কালেজে পদার্পণ করিবামাত্র মধুসূদনের আশ্চর্য ধীশক্তি সকলের গোচর হইল। তিনি ১৮৩৭ সালে কালেজে প্রবিষ্ট হইয়া ১৮৪১ সাল পর্যন্ত তথায় পাঠ করিয়াছিলেন। এই অল্পকালের মধ্যে সিনিয়ার স্কলারশিপের শ্রেণী পর্যন্ত পাঠ করেন; এবং সকল শ্রেণীতেই অগ্রগণ্য বালকদিগের মধ্যে পরিগণিত হইয়াছিলেন। সে সময়ে যাঁহারা তাঁহার সমাধ্যায়ী ছিলেন, তাঁহারা বলেন যে তিনি গণিত বিদ্যায় একেবারে অবহেলা প্রকাশ করিতেন এবং কাব্য ও ইতিহাস পাঠেই অধিক মনোযোগী ছিলেন। আদুরে ছেলের চরিত্রে যে সকল লক্ষণ প্রকাশ পায় তাহা এ সময়ে তাঁহার চরিত্রে সুস্পষ্ট প্রতীয়মান হইত। তিনি অমিতব্যয়ী, বিলাসী, আমোদ-প্রিয়, কাব্যানুরাগী ও বন্ধুবান্ধবের প্রতি প্রীতিমান ছিলেন। ধুলিমুষ্টির ন্যায় অর্থমুষ্টি ব্যয় করিতেন। সে সময়ে সুরাপান ইংরাজী শিক্ষিত ব্যক্তিদিগের মধ্যে একটা সৎসাহসের কার্য্য বলিয়া গণ্য ছিল; মধুসূদনের সময়ে কালেজের অনেক ছাত্র সুরাপান করাকে বাহাদুরির কাজ মনে করিত। মধু তাঁহাদের মধ্যে একজন অগ্রগণ্য ছিলেন। এতদ্ব্যতীত অপরাপর অসমসাহসিক পাপকার্য্যেও তিনি লিপ্ত হইতেন। পিতামাতা দেখিয়াও দেখিতেন না; বরং অর্থ যোগাইয়া প্রকারান্তরে উৎসাহদান করিতেন। যাহা হউক, বিবিধ উচ্ছৃঙ্খলতা সত্ত্বেও মধুসুদন জ্ঞানানুশীলনে কখনই অমনোযোগী হইতেন না। কালেজে তিনি কাপ্তেন রিচার্ডসনের নিকট ইংরাজী-সাহিত্য পাঠ করিতেন। সৎক্ষেত্রে পতিত কৃষির ন্যায় রিচার্ডসনের কাব্যানুরাগ মধুর হৃদয়ে পড়িয়া সুন্দর ফল উৎপন্ন করিয়াছিল। তিনি ছাত্রাবস্থাতেই ইংরাজী কবিতা লিখিতে আরম্ভ করেন। প্রতিভার শক্তি কোথায় যাইবে! সেই ইংরাজী কবিতাগুলিতে তাঁহার যথেষ্ট কবিত্বশক্তি প্রকাশ পাইয়াছে।

কবিতারচনাতে ও পাঠ্যবিষয়ে তাঁহার কৃতিত্ব দেখিয়া সকলেই অনুমান করিতেন যে মধু কালে দেশের মধ্যে একজন অগ্রগণ্য ব্যক্তি হইবেন। মধুর পিতামাতাও বোধ হয় সেই আশা করিতেন। কিন্তু যে প্রতিভার গুণে মধু অসাধারণ শক্তি প্রদর্শন করিতেন; সেই প্রতিভাই

 ৩০