পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/২৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩৪
রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ।

তাঁহাকে সুস্থির থাকিতে দিল না। যৌবনের উন্মেষ হইতে না হইতে তাঁহার আভ্যন্তরীণ শক্তি তাঁহাকে অস্থির করিয়া তুলিতে লাগিল। গতানুগতিকের চিরপ্রাপ্ত বীথিকা তাঁহার অসহনীয় হইয়া উঠিল। দশজনে যাহা করিতেছে, দশজনে যাহাতে সস্তুষ্ট আছে, তাহা তাঁহার পক্ষে ঘৃণার বস্তু হইয়া উঠিল; তাঁহার প্রকৃতি নুতন ক্ষেত্র, নূতন কাজ, নূতন উত্তেজনার জন্য লালায়িত হইতে লাগিল।

 ইত্যবসরে তাহার জনকজননী তাঁহার এক বিবাহের প্রস্তাব উপস্থিত করিলেন। একটা আট বৎসরের বালিকা, যাহাকে চিনি না জানি না, তাঁহাকে বিবাহ করিতে হইবে, এই চিন্তা মধুকে ক্ষিপ্ত-প্রায় করিয়া তুলিল। তিনি পলায়নের পরামর্শ করিতে লাগিলেন। পলাইবেন কোথায়? একেবারে বিলাতে! তাহা না হইলে আর প্রতিভার খেয়াল কি! কার সঙ্গে যাইবেন, টাকা কে দিবে, সেখানে গিয়া কি করিবেন, তাহার কিছুরই স্থিরতা নাই; যখন পলাইতে হইবেই, তখন দেশ ছাড়িয়া একেবারে বিলাতে পলানই ভাল! পরামর্শ স্থির আগে হইল, টাকার চিন্তা পরে আসিল। ‘টাকা কোথায় পাই, বাবা জানিলে দিবেন না, মার নিকটেও পাইব না, আর ত কাহাকেও কোথায়ও দেখি না। শেষে মনে হইল মিশনারিদিগের শরণাপন্ন হই, দেখি তাঁহারা কিছু করিতে পারেন কি না। গেলেন কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়ের নিকটে; তিনি নাড়িয়া চাড়িয়া দেখিলেন যে তাঁহার মনে খ্রীষ্টধর্ম্ম গ্রহণ অপেক্ষা বিলাত যাওয়ায় বাতিকটাই বেশী। এইরূপে আরও কয়েক দ্বারে ফিরিলেন। শেষে কি হইল, কি দেখিলেন, কি শুনিলেন, কি ভাবিলেন, কি বুঝিলেন, তাঁহার বন্ধুরা কিছুই জানিতে পারিলেন না।

 ১৮৪৩ সালের জানুয়ারি মাসের শেষে বন্ধুগণের মধ্যে জনরব হইল যে, মধু খ্রীষ্টান হইবার জন্য মিশনারীদিগের নিকট গিয়াছে। অমনি সহরে হুলস্থূল পড়িয়া গেল। হিন্দুকালেজের প্রসিদ্ধ ছাত্র ও সদর দেওয়ানী আদালতের প্রধান উকীল রাজনারায়ণ দত্তের পুত্র খ্রীষ্টান হইতে যায়—এই সংবাদে সকলের মন উত্তেজিত হইয়া উঠিল। রাজনারায়ণ পুত্রকে প্রতিনিবৃত্ত করিবার জন্য চেষ্টার অবধি রাখিলেন না। কিন্তু কিছুতেই কিছু হইল না। উক্ত সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রারম্ভে তিনি খ্রীষ্টধর্ম্মে দীক্ষিত হইলেন।

 আমরা সহজেই অনুমান করিতে পারি তাঁহার পিতামাতা ও আত্মীয় স্বজনের মনে কিরূপ আঘাত লাগিল। কিন্তু তাঁহারা তাঁহাকে অর্থ