পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/২৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নবম পরিচ্ছেদ।
২৩৫

সাহায্য করিতে বিরত হইলেন না। খ্রীষ্টধর্ম্ম গ্রহণ করিয়া মধু হিন্দু কালেজ পরিত্যাগ করিলেন এবং বিধিমতে খ্রীষ্টীয় শাস্ত্র শিক্ষা করিবার জন্য বিশপস কালেজে প্রবেশ করিলেন। এখানে তিনি ১৮৪৩ সাল হইতে ১৮৪৭ সাল পর্য্যন্ত ছিলেন; এবং এখানে অবস্থানকালে হিব্রু, গ্রীক, লাটিন প্রভৃতি নানা ভাষা শিক্ষা করিয়াছিলেন। কিন্তু বিশপস কালেজেই বা কে তাঁহাকে বাঁধিয়া রাখে? তাঁহার বিলাতগমনের খেয়ালটার যে কি হইল তাহার প্রকাশ নাই; কিন্তু বঙ্গদেশ তাঁহার পক্ষে আবার অসহ্য হইয়া উঠিল। আবার গতানুগতিকের প্রতি বিতৃষ্ণ জন্মিল; অবশেষে একদিন কাহাকেও সংবাদ না দিয়া একজন সহাধ্যায়ী বন্ধুর সহিত মাক্সাজে পলাইয়া গেলেন।

 মাদ্রাজে গিয়া তিনি এক নুতন অভাবের মধ্যে পড়িলেন। অর্থের জন্য তাঁহাকে কখনও চিন্তিত হইতে হয় নাই। দেশে থাকিতে পিতামাতা তাঁহার সকল অভাব দূর করিতেন। সেখানে তাঁহাকে নিজের উদরায় নিজে উপার্জ্জন করিতে হইল। কিন্তু তিনি ইংরাজী রচনাতে যেরূপ পারদর্শী ছিলেন, তাঁহার কাজের অভাব হইল না। তিনি মান্দ্রাজ সহরের ইংরাজ—সম্পাদিত কতকগুলি সংবাদপত্রে লিখিতে আরম্ভ করিলেন। অল্পকালের মধ্যেই তাঁহার খ্যাতি প্রতিপত্তি হইয়া উঠিল। ১৮৪৯ সালে “Captive Lady” নামে একখানি ইংরাজী পদ্যগ্রন্থ মুদ্রিত ও প্রচারিত করিলেন। তাহাতে তাঁহার কবিত্বশক্তির ও ইংরাজীভাষাভিজ্ঞতার যথেষ্ট প্রশংসা হইল। কিন্তু মহাত্মা বেথুনের ন্যায় ভাল ভাল ইংরাজগণ তাহা দেখিয়া বলিলেন যে বিদেশীয়ের পক্ষে ইংরাজী কবিতা লিখিয়া প্রতিষ্ঠালাভের চেষ্টা করা মহা ভ্রম; তদপেক্ষা এরূপ প্রতিভা স্বদেশীয় ভাষাতে নিয়োজিত হইলে দেশের অনেক উপকার হইতে পারে।

 তাঁহার প্রতিভা আবার তাঁহাকে অস্থির করিয়া তুলিল। সেখানে একজন ইংরাজমহিলার পাণিগ্রহণ করিয়াছিলেন, তাঁহাকে পরিত্যাগ পূর্ব্বক আর একটা ইংরাজমহিলাকে পত্নীভাবে লইয়া ১৮৫৬ সালে, আবার দেশে পলাইয়া আসিলেন। কিন্তু হায় দেশে আসিয়া কি পরিবর্ত্তনই দেখিলেন। পিতা মাতা এ জগতে নাই; আত্মীয় স্বজন বিধর্ম্মী বলিয়া তাঁহাকে মন হইতে পরিত্যাগ করিয়াছেন; পৈতৃক সম্পত্ত্বি অপরের গ্রাস করিয়া বসিয়াছে; বাল্যসুহৃদ ও সহাধ্যারিগণ তাঁহাকে ভুলিয়া গিয়াছেন;