এবং নানা স্থানে বিক্ষিপ্ত হইয়া পড়িয়াছেন; নব্যবঙ্গের রঙ্গভূমিতে নুতন একদল নেতা আসিয়াছেন, তাঁহাদের ভাব গতি অন্য প্রকার; এইরূপে মধুসূদন স্বদেশে আসিয়াও যেন বিদেশীয়দিগের মধ্যে পড়িলেন। এই অবস্থাতে তাঁহার বন্ধু গৌরদাস বসাকের সাহায্যে কলিকাতা পুলিস আদালতে ইণ্টারপ্রিটারি কর্ম্ম পাইয়া, তাহা অবলম্বন পুর্ব্বক দিন যাপন করিতে লাগিলেন।
কিরূপে তাঁহার বন্ধু গৌরদাস বাবু তাঁহাকে পাইকপাড়ার রাজাদ্বয়ের ও যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর মহাশয়ের সহিত পরিচিত করিয়া দেন, কিরূপে তাঁহারা সংস্কৃত রত্নাবলী নাটকের বাঙ্গালা অনুবাদ করাইয়া বেলগাছিয়া রঙ্গালয়ে তাঁহার অভিনয় করান ও তৎসূত্রে উক্ত অনুবাদের ইংরাজী অনুবাদ করিয়া কিরূপে মধুসূদন শিক্ষিতব্যক্তিগণের নিকট পরিচিত হন, তাহা পূর্ব্বে কিঞ্চিৎ বর্ণন করিয়াছি। বলিতে কি ঐ রত্নাবলীর ইংরেজী অনুবাদ মধুসূদনের প্রতিভা বিকাশের হেতুভূত হইল। তিনি সংস্কৃত নাটক রচনার রীতির দোষগুণ ভাল করিয়া অনুভব করিলেন; এবং এক নবপ্রণালীতে বাঙ্গালা নাটক রচনার বাসনা তাঁহার অন্তরে উদিত হইল। তিনি তদনুসারে ১৮৫৮ সালে “শর্ম্মিষ্ঠা” নামক নাটক রচনা করিয়া মুদ্রিত করিলেন। মহা সমারোহে তাহা বেলগাছিয়া রঙ্গালয়ে অভিনীত হইল। তৎপরেই মধুসুদন প্রাচীন গ্রীসদেশীয় পুরাণ অবলম্বন করিয়া “পদ্মাবতী” নামে আর একখানি নাটক রচনা করেন। এই উভয় গ্রন্থে তিনি যশোলাভে কৃতকার্য্য হইয়া বাঙ্গালা ভাষাতে গ্রন্থ রচন বিষয়ে উৎসাহিত হইয়া উঠিলেন। ইহার পরেই তিনি “একেই কি বলে সভ্যতা” ও “বুড়োশালিকের ঘাড়ের রে” নামে দুই খানি প্রহসন রচনা করেন। তৎপরে ১৮৬০ সালে রাজেদ্রলাল মিত্র-সম্পাদিত “বিবিধার্থসংগ্রহ” নামক পত্রে তাঁহার নব অমিত্রাক্ষর ছন্দে প্রণীত “তিলোত্তম-সম্ভব কাব্য” প্রকাশিত হইতে আরম্ভ হয়; এবং অল্পকাল পরেই পুস্তকাকারে মুদ্রিত হয়। তিলোত্তমা বঙ্গসাহিত্যে এক নূতন পথ আবিষ্কার করিল। বঙ্গীয় পাঠকগণ নূতন ছন্দ, নূতন ভাব, নূতন ওজস্বিতা দেখিয়া চমকি উঠিলেন। মধুসূদনের নাম ও কীর্ত্তি সর্ব্বসাধারণের আলোচনার বিষয় হইল।
ইহার পরে তিনি “মেঘনাদবধ” কাব্য রচনাতে প্রবৃত্ত হন। ইহাই বঙ্গ