পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/২৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪২
রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ

মনের সমক্ষে উপস্থিত করিতেন; তৎপরে তাহাদিগকে জিজ্ঞাসু দেখিয়া সেই জ্ঞাতব্য বিষয়টা তাহাদের নিকট উপস্থিত করিতেন। একবার তাহা উত্তমরূপে বিধৃত করিয়া তৎপরেই আবার প্রশ্নের দ্বারা ছাত্রদিগের মুখ হইতে বাহির করিবার চেষ্টা করিতেন। এইরূপে বিষয়টা জন্মের মত ছাত্রগণের মনে মুদ্রিত হইয়া যাইত। ইহার ভিতরে যদি ছাত্রদিগের অন্তরে কোনও মহৎ সত্য বা উদার ভাব মুদ্রিত করিবার অবসর আসিত তাহা হইলে তিনি উৎসাহে আত্মহারা হইয়া যাইতেন। তখন আর পাঠ্য বিষয়ে মন থাকিত না। এই সকল কারণে পাঠ্যগ্রন্থে পাঠের উন্নতি আশানুরূপ হইত না। সেজন্য তিনি কখন কখনও কর্তৃপক্ষের বিরাগ-ভাজন হইতেন। পূর্ব্বেই বলিয়ছি তাঁহার ছাত্রগণ পাঠ্য বিষয়ে অধিক উন্নতি করিত না বটে, কিন্তু যেটুকু পড়িত তাহাতেই ব্যুৎপত্তি লাভ করিত; এবং তদ্ভিন্ন নানা বিষয়ে জ্ঞান লাভ করিয়া সুশিক্ষিত হইত। কেবল তাহা নহে, হৃদয় মন চরিত্রে এমন কিছু পাইত যাহা চিরদিনের মত জীবনপথের সম্বল হইয়া থাকিত। রসাপাগলাতে লাহিড়ী মহাশয় যে অল্পকাল ছিলেন, তাহার মধ্যেও অনেক যুবককে প্রকৃত সাধুতার পথ দেখাইয়া যান।

 রসাপাগলাতে অবস্থান কালে তিনি কলিকাতার অতি সন্নিকটেই থাকিতেন; সুতরাং সর্ব্বদাই কলিকাতার বন্ধুদিগের সহিত গিয়া মিশিতেন। রামগোপাল ঘোষের ভবন তাঁহার নিজের বাড়ীর মত ছিল। অবসর পাইলেই সেখানে গিয়া রাত্রি যাপন করিতেন। সেই সূত্রে তৎকাল-প্রসিদ্ধ প্রায় প্রত্যেক শিক্ষিত ব্যক্তির সহিত তাঁহার আলাপ ও আত্মীয়তা হইয়াছিল। অবশ্য তিনি সুরাপানের গোষ্ঠীতে থাকিতেন। কিন্তু তাহার ফল এই হইত যে, তাঁহার মুখের দিকে চাহিয়া অপর সকলকে সংযত হইয়া চলিতে হইত। কেহই অভদ্র আচরণ করিতে সাহস করিত না। আমি লাহিড়ী মহাশয়ের মুখে শুনিয়াছি যে এই সময়ে তিনি একটী বিশেষ কারণে বহুদিনের জন্য সুরাপান পরিত্যাগ করিয়াছিলেন। একদিন তিনি দেখিলেন যে রামগোপাল ঘোষ মহাশয়ের সম্পৰ্কীয় একটা যুবক অতিরিক্ত সুরাপান করিয়া অতি অভদ্র আচরণ করিতেছে। দেখিয়া তাহার অতিশয় লজ্জা বোধ হইল, তিনি রামগোপাল ঘোষকে বলিলেন—“দেখ রামগোপাল, আমাদের সুরাপান দেখিয়া বাড়ীর ছেলের খারাপ হইয়া যাইতেছে। আজ তোমার * * * এর অতি অভদ্র আচরণ দেখিয়াছি। এস আমরা স্বরাপান পরিত্যাগ করি।” রামগোপাল বাবু বোধ হয় সে উপদেশ