পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/২৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪৪
রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ।

has laboured more assiduously and successfully for the moral elevation of his pupils.”

 অর্থ-বাবু রামতনু লাহিড়ীকে বিদায় নিবার সময় আমি বলিতে চাই যে ইনি চলিয়া গেলে গবর্ণমেণ্ট এমন একজন শিক্ষক হারাইবেন, যাঁহার অপেক্ষা আর কোনও শিক্ষক অধিক বিশ্বস্ততা, উৎসাহ ও তৎপরতার সহিত স্বীয় কর্তব্যসাধন করেন নাই অথবা ছাত্রগণের নৈতিক উন্নতির জন্য অধিক শ্রম করেন নাই, বা সে বিষয়ে অধিক কৃত কার্য্যতা লাভ করেন নাই।”

 কালেজের অধ্যক্ষ তাঁহার পত্রে যে কয়েকটা কথা বলিয়াছিলেন তাহা শত শত হৃদয়ের অন্তর্নিহিত বাণীর পুনরুক্তি মাত্র। যদি কোনও মানুষের সম্বন্ধে এ কথা সত্য হয়—"তিনি শিক্ষক হইয়াই জন্মিয়াছিলেন,” তাহা লাহিড়ী মহাশয়ের সম্বন্ধে। তিনি যে শিক্ষকতা কার্য্যে অসাধারণ কৃতকার্য্যতা লাভ করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন, তাঁহার ভিতরকার কথা এই বুঝিয়াছি যে তিনি নিজে চিরজীবন আপনাকে শিক্ষাধীন রাখিয়াছিলেন। কোনও নুতন বিষয় জানিবার জন্য তাঁহার যে ব্যগ্রতা ও জানিলে যে আনন্দ দেখিয়াছি, অন্য কোনও মানুষে সেরূপ আগ্রহ বা আনন্দ দেখি নাই। উত্তরকালে যখন তিনি অশীতিপর স্থবির, তখনও কাহারও মুখে কোনও ভাল কথা শুনিলে, আনন্দে অস্থির হইয়া উঠিতেন; বলিতেন “রসো, রসে কথাটা লিখে নি” এই বলিয়া স্মারক-লিপির পুস্তকখানি বাহির করিতেন। শিক্ষকাবস্থাতে ছাত্রগণকে যখন শিক্ষা দিতেন, তখন কোনও বালক যদি কখনও তাহার কোনও ভ্রম প্রদর্শন করিত, বা তাহার কৃত কোনও ব্যাখ্যা অপেক্ষা উৎকৃষ্টতর ব্যাখ্যা দিতে পারিত, তাহা হইলে তিনি শিশুর ন্যায় বিনীতভাবে শুনিতেন, এবং ব্যাখ্যাটী উৎকৃষ্ট হইলে আনন্দ প্রকাশ করিতেন।

 এই কৃষ্ণনগর কলেজে শেষ অবস্থানকালের কয়েকটী গল্প শুনিয়াছি। একবার লাহিড়ী মহাশয় পাঠ্য বিষয়ের কোনও এক অংশের ব্যাখ্যা করিতেছেন, ইতিমধ্যে একটা বালক বলিল, “মহাশয়, ওটার মানে ত ওরকম নয়।” তিনি অমনি তন্মনষ্ক, “সে কি? তুমি কি আর কোনও অর্থ জান না কি?” তখন বালকটী আর এক প্রকার ব্যাখ্যা দিতে প্রবৃত্ত হইল। ব্যাখ্যা শুনিয়া লাহিড়ী মহাশয় অতিশয় আনন্দিত হইলেন, “এ মানে তুমি কোথায় পেলে?” অনুসন্ধানে জানিলেন,