পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/৩১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
দশম পরিচ্ছেদ।
২৫৭

অপরাপর নেতাদিগের দ্যায় মহেঞ্জেলাল সরকার ও সে সময়ে কলিকাতাবাসীর ও সেই সঙ্গে সমগ্র বঙ্গবাসীর চিত্তকে প্রবলরূপে আন্দোলিত করিয়াছিলেন।

 কেশবচন্দ্রের বক্তৃতা, দীনবন্ধুর নাটক, বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস, বিদ্যাভূষণ মহাশয়ের সোমপ্রকাশ, মহেন্দ্রলাল সরকারের হোমিওপেথি, এই সকলে এই কালের মধ্যে শিক্ষিত দলের মনে যেমন নবভাব আনিম্ন দিতেছিল, তেমনি আর এক কার্য্যের আয়োজন হইয়া নব আকাঙ্ক্ষার উদয় করিয়াছিল। তাহা “ষ্ঠাসনাল পেপার” নামক সাপ্তাহিক পত্রের সম্পাদক নবগোপাল মিত্র ' মহাশয়ের প্রতিষ্ঠিত, “জাতীয় মেলা’ নামক মেলা ও প্রদর্শনীর প্রতিষ্ঠা এবং দেশের সকল বিভাগের ও সকল শ্রেণীর নেতৃবৃন্দের তাহার সহিত যোগ। বঙ্গসমাজের ইতিবৃত্তে ইহা একটা প্রধান ঘটনা; কারণ সেই যে বাঙ্গালির মনে জাতীর উন্নতির স্পৃহা জাগিয়াছে তাহ আর নিদ্রিত হয় নাই।

 নবগোপাল মিত্র মহাশয়ের হৃদয় স্বদেশ-প্রেমে পূর্ণ ছিল। তিনি বহুদিন হইতে অনুভব করিয়া আসিতেছিলেন যে, দেশের লোকের দৃষ্টিকে বিদেশীয় রাজাদিগের প্রসাদ লাভের দিক হইতে ফিরাইয়া জাতীয় স্বাবলম্বনের দিকে আন কৰ্ত্তব্য। লোকে কথায় কথায় গবর্ণমেণ্টের দ্বারস্থ হয়, ইহা তাহার সহ হইত না। এজন্ত তিনি নিজ প্রচারিত সংবাদ পত্রে দুঃখ প্রকাশ করিতেন; বন্ধু বান্ধবের নিকটে ক্ষোভ করিতেন; এবং কি উপায়ে দেশের লোকের মনে জাতীয় স্বাবলম্বন প্রবৃত্তি প্রবল হয় সেই চিন্তা করিতেন। এই চিন্তার ফলস্বরূপ ১৭৮৮ শকের (১৮৬৭ খ্ৰীষ্টাব্দের) চৈত্র সংক্রান্তিতে হিন্দুমেলার অধিবেশন হইল। গণেন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয় সম্পাদক ও নবগোপাল মিত্র মহাশয় সহকারী সম্পাদক হইলেন। . মেলার অধ্যক্ষগণ স্বদেশীয় উন্নতি, স্বদেশীয় সাহিত্যের বিকাশ, স্বদেশীয় সংগীতাদির চর্চা, স্বদেশীয় কুন্তী প্রভৃতির পুনর্বিকাশ, প্রভৃতির উৎসাহ नन করিবার জন্তfপ্রতিজ্ঞারূঢ় হইলেন। বর্ষে বর্ষে চৈত্র সংক্রাস্তিতে একটী মেলা খোলা স্থির হইল। দেশের অনেক মান্য গণ্য ব্যক্তি এইজন্ত অর্থ সাহায্য করিতে অগ্রসর হইলেন। উৎসাহদাতাদিগের মধ্যে রাজা কমলকৃষ্ণ বাহাদুর, বাবু রমানাথ ঠাকুর, বাবু কাশীশ্বর মিত্র, বাবু দুর্গাচরণ লাহ, বাবু প্যারীচরণ সরকার, বাবু গিরিশ্চন্দ্র ঘোষ, বাবু কৃষ্ণদাস পাল, বাবু স্বাজনারায়ণ বসু, বাবু দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর, পণ্ডিত জয়নারায়ণ তর্কপঞ্চানন পণ্ডিত ভারতচন্দ্র শিরোমণি, পণ্ডিত তারানাথ তর্কবাচস্পতি, প্রভৃতির নামের উল্লেখ দেখা যায়