অতএব উদ্যোগকর্তৃগণ সকল বিভাগের মানুষকে সম্মিলিত করিতে ক্রটী করেন নাই।
১৮৬৮ সালে বেলগাছিয়ার সাতপুকুরের বাগানে মহাসমারোহে মেলার দ্বিতীয় অধিবেশন হয়। সেই দিন সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয়ের প্রণীত স্বপ্রসিদ্ধ জাতীয় সংগীত “গাও ভারতের জয়” সুগায়কদিগের দ্বারা গীত হয়; আমরা কয়েকজন জাতীয় ভাবের উদ্দীপক কবিতা পাঠ করি; গণেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও নবগোপাল মিত্র মহাশয় মেলার উদ্দেশু সকলকে বুঝাইয়া দেন; এবং স্বজাতি-প্রেমিক সাহিত্যজগতে সুপরিচিত মনোমোহন বস্থ মহাশয় একটা হৃদয়গ্রাহী বক্তৃতা পাঠ করেন। মেলার প্রথম সম্পাদক গণেন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয় মেলার উদ্দেশু এই ভাবে বর্ণন করেন—“ভারতবর্ষের এই একটা প্রধান অভাব যে, আমাদের সকল কার্য্যেই আমরা রাজপুরুষগণের সাহায্য যাঙ্কা করি, ইহা কি সাধারণ লজ্জার বিষয়! কেন, আমরা কি মনুষ্য নহি? * * * অতএব যাহাতে এই আত্মনির্ভর ভারতবর্ষে স্থাপিত হয়, ভারতবর্ষে বদ্ধমূল হয়, তাহ এই মেলার দ্বিতীয় উদ্দেশু।” সংক্ষেপে বলিতে গেলে জাতীয় স্বাবলম্বন প্রবৃত্তিকে জাতীয় চিত্তে উদ্দীপ্ত করাই হিন্দুমেলার উদ্দেশু ছিল। মুখের বিযয় এই মেলার আয়োজনের দ্বারা সে উদ্দেশু বহুল পরিমাণে সাধিত হইয়াছে। ইহার পরে মনে মোহন বসু প্রভৃতি জাতীয় সংগীত য়চনা করিতে লাগিলেন; আমরা জাতীয় ভাবোদীপক কবিতা রচনা করিতে লাগিলাম; বিক্রমপুর হইতে দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায় আসিয়া আমাদের জাতীয় ভাবে যোগ দিলেন; এবং আগ্রার আনন্দচন্দ্র রায়, সংগীত রচনা -করিয়া দুঃখ করিলেন;—
কত কাল পরে বল ভারত রে!
দুখসাগর সাতারি পার হবে; ইত্যাদি।
দেখিতে দেখিতে স্বদেশপ্রেম সৰ্ব্বত্র ব্যাপ্ত হইয়া পড়িল। ১৮৬৮ সালের পরেও হিন্দুমেলার কাজ অনেক দিন চলিয়াছিল। নবগোপাল বাবু ইহাকে জীবিত রাখিবার চেষ্টা করিয়াছিলেন। ক্রমে তাহ উঠিয়া যায়।
এই ১৮৬০ হইতে ১৮৭০ সালের মধ্যে কেবল যে কলিকাতা সমাজ নানা তরঙ্গে আন্দোলিত হইতেছিল তাহা নহে। বঙ্গদেশের অপরাপর প্রধান প্রধান স্থানেও আন্দোলন চলিতেছিল। তন্মধ্যে পূর্ববঙ্গের প্রধান স্থান ঢাকা