পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/৩২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২২৫
রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ

 এই গোলমালের মধ্যে আর এক ঘটনা ঘটিল। ১৮৬৪ সালের স্বপ্রসিদ্ধ ঝড়ে কলিকাতা ব্রাহ্মসমাজের বাড়ী ভাঙ্গিয়া যাওয়াতে তাহার জীর্ণ সংস্কারের প্রয়োজন হইল। তখন কিছুদিনের জন্ত সমাজের উপাসনা দেবেন্দ্রনাথের গৃহে উঠিয়া গেল। সেখানে যে দিন প্রথম উপাসনা আরম্ভ হইল, সে দিন উপবীত-ত্যাগী উপাচাৰ্য্যদ্বয় গিয়া দেখেন যে তাহাদের উপস্থিত হইবার পূৰ্ব্বেই পূৰ্ব্বকার উপবীতধারী উপাচাৰ্য্যগণ উপাসনা কাৰ্য আরম্ভ করিয়াছেন। ইহা -যুবক ব্রাহ্মদলের পক্ষে অসহনীয় বোধ হইল। র্তাহীদের অনেকে সেই মুহূৰ্ত্তেই সে স্থান ত্যাগ করিয়া অন্ত স্থানে গিয়া উপাসনা করিলেন। বলিতে গেলে এই সময় হইতেই প্রকাগু গৃহবিচ্ছেদ আরম্ভ হইল। ইহার পর কেশবচন্দ্র অনেক দিন কোনও প্রকারে সম্মিলিত ভাবে থাকিবার চেষ্টা করিয়াছিলেন বটে, কিন্তু চরমে শান্তি স্থাপিত হওয়া অসম্ভাবিত হইল।

 বরায় তিনি কলিকাতা সমাজের সম্পাদকের পদ ত্যাগ করিতে বাধ্য হইলেন। সেই পদে দেবেন্দ্রনাথের জ্যেষ্ঠপুত্র দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর নিযুক্ত হইলেন। কেশবচন্দ্র কলিকাতা সমাজের অধ্যক্ষত হইতে বিচুত হইয়া প্রতিনিধিসভাকে প্রধান যন্ত্ররূপে আশ্রয় করিলেন। তাহার সাহায্যে একটা ব্রাহ্মমণ্ডলী গঠন ও ব্রাহ্মধৰ্ম্ম প্রচার করিবার চেষ্টা করিতে লাগিলেন। দেবেন্দ্রনাথ এ বিষয়ে প্রথমে তাহার সাহায্য করিয়াছিলেন, কিন্তু পরে যুবকদলেয় অভিসন্ধির প্রতি সন্দিহান হইয়া পশ্চাৎপদ হইলেন। কিন্তু সৰ্ব্ববিধ উন্নতিকর প্রস্তাবে সহায়তা করিতে বিরত হইলেন না। যুবকদল আত্মোস্নতির নিমিত্ত কোনও প্রস্তাব করিলেই তিনি তাহাতে যোগ দিতেন ও বিধিমতে সাহায্য করিতেন। এমন কি যুবকদলের প্রতিষ্ঠিত ব্রাহ্মবন্ধু সভাতে একবার তিনি “ব্ৰাহ্মসমাজের পঞ্চবিংশতি বৎসরের পরীক্ষিত বৃত্তান্ত” বিষয়ে বক্তৃতা করিয়াছিলেন।

 ১৮৬৫ সালের আষাঢ় মাসে যুবকদলের অগ্রণীগণ কলিকতা সমাজের অধ্যক্ষদিগের নিকট এই প্রার্থনা জানাইলেন যে সমাজের বেদীতে উপবীতধারী উপাচাৰ্য্যগণকে বসিতে না দেওয়া হয়; এবং যদি এ প্রার্থনা অগ্রাহ হয়, তাহা হইলে তাহাদিগকে স্বতন্ত্র দিনে সমাজগৃহে উপাসনা করিতে দেওয়া হয়। উত্তরে দেবেন্দ্রনাথ বলিলেন যে যাহারা বহুকাল সমাজের সহিত যোগ দিয়া অনুরাগের সহিত কাজ করিয়া আসিতেছেন, র্তাহাদিগকে এক্ষণে স্বাধিকারচ্যুত করা তিনি পক্ষপাতের কার্য্য বলিয়া মনে করেন। তৎপরে