পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/৩৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
একাদশ পরিচ্ছেদ।
২৭৯

করিয়া দেন। ঐ কৰ্ম্মের আয় অতি অল্প ছিল, কিন্তু তাহাতেই তিনি নিজ আয়ের অনেক সাহায্য হইত বলিয়া মনে করিতেন। কিন্তু এই কাজ করিয়া দীনবন্ধু চিত্তে সন্তোষ লাভ করিতেন না। তাহার মন অধিক জ্ঞান লাভের জন্ত, বিশেষতঃ ইংরাজী শিক্ষা করিবার জন্ত, পিঞ্জরাবদ্ধ বিহঙ্গের হ্যায় সৰ্ব্বদা আপনাকে অমুখী বোধ,করিত।

 অবশেষে একদিন দীনবন্ধু কৰ্ম্ম ছাড়িয়া খ্ৰীয় পিতাকে কিছু ন বলিয়া গোপনে কলিকাতায় পলাইয়া আসিলেন; এবং একজন আত্মীয়ের আশ্রয়ে, থাকিয়া ইংরাজী শিক্ষা আরম্ভ করিলেন। এই সময়ে তাহাকে বিদ্যা শিক্ষার জন্ত নানা প্রকার ক্লেশ সহ করিতে হইয়াছিল। স্বয়ং রন্ধন করিয়া খাওয়াইয়া অপরের বাসাতে থাকিতে হইত। কিন্তু কোনও ক্লেশেই র্তাহাকে স্বীয় অভীষ্ট পথ হইতে বিরত করিতে পারিত না।

 দীনবন্ধুর কলিকাতার আসা ও বিদ্যাশিক্ষা আয়ম্ভ করা বিষয়ে একটী কৌতুকজনক ঘটনা আছে। শৈশবে র্তাহার পিতা তাহার নাম রাখিয়াছিলেন “গন্ধৰ্ব্ব নারায়ণ”; লোকের মুখে এই নাম দাড়াইল “গন্ধ", সময় বয়স্ক বালুকদিগের মুখে হইয়া পড়িল “খু খু গন্ধ, গন্ধ"! এই রূপে পিতৃদত্ত নামটা বালকের অশাস্তির একটা কারণ হইয়া উঠিয়াছিল। যদিও তাঁহার জননী বিদ্রপকারী বালকদিগকে তিরস্কার করিয়। বলিতেন “তোরা একদিন দেখবি ওর গন্ধে দেশ আমোদিত হবে” তথাপি সমবয়স্কদিগের বিদ্রুপে শিশু গন্ধৰ্ব্ব নারায়ণ নিশ্চয় উত্যক্ত হইতেন। বোধ হয় এই কারণেই তিনি কলিকাতাতে আসিয়া নিজে দীনবন্ধু নাম লইলেন এবং সেই নামেই স্কুলে ভর্তি হইলেন। যাহার দুঃখ-সন্তপ্ত হৃদয় হইতে ‘নীলদর্পণ’ বাহির হইরাছিল, তিনি যে নিজে দীনবন্ধু নাম পছন্দ করিয়া লইয়াছিলেন এট, একটা বিশেষ স্মরণীর ঘটনা বলিতে হুইবে। যাহা হউক তিনি স্কুলে ভর্তি হইয়া এরূপ আগ্রহের সহিত আত্মোন্নতি সাধনে নিযুক্ত হইলেন যে, সকল শ্রেণীতে প্রশংসা ও নির্দিষ্ট প্লারিতোষিক লাভ করিতে লাগিলেন। দীনবন্ধু শিক্ষা বিষয়ে একটু অগ্রসর হইয়াই গুপ্ত কবির প্রভাবের মধ্যে পড়িয়া গেলেন; প্রভাকরে লিখিতে আরম্ভ করিলেন। এই সময়ে তিনি “মানবচরিত্র” নামে একখানি পদ্যগ্রন্থ রচনা করেন। তাছাতে উহার “কৰিত্ব খ্যাতি তদানীন্তন সমাজে ব্যাপ্ত হয়। প্রভাকরে লিখিত কবিতাগুলির মধ্যে কতকগুলি কবিতা লোকের দৃষ্টিকে বিশেষরূপে আকৃষ্ট করিরাছিল। কিন্তু তিনিও চরমে বঙ্কিমের স্থায় পদ্ধ রচনা