পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/৩৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২২৫
একাদশ পরিচ্ছেদ।

ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকার একজন অগ্রগণ্য ব্যক্তি। এরূপ বিমল সত্যাকুরাগ অতি অল্প লোকের মনে দেখিতে পাওয়া যায়; এরূপ সাহস ও দৃঢ়চিত্ততা অতি অল্প বাঙ্গালীই দেখাইতে পারিয়াছেন; এরূপ জ্ঞানাচুরাগ এই বঙ্গদেশে ফুলভ। র্তাহার সংশ্রবে আসিয়া এ জীবনে বিশেষ উপকৃত হইয়াছি। তাহার নাম নব্যবঙ্গের শিক্ষাগুরুদিগের মধ্যে গণনীয়; সুতরাং আনন্দের সহিত র্তাহার জীবনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ এই গ্রন্থে সন্নিবিষ্ট করিতেছি।

 কলিকাতার অদূরবর্তী হাবড়া বিভাগের পাইকপাড়া নামক গ্রামে, ১৮৩৩ সালের ২রা নবেম্বর দিবসে মহেন্দ্রলাল জন্মগ্রহণ করেন। পাঁচ বৎসর বয়সের সময় ইহার জননী ছর মাস বয়স্ক আর একটী পুত্র কোলে ইহাকে লইয়া কলিকাতা নেবুতলাতে ইহার মাতামহালয়ে আগমন করেন। ইহার অল্পকাল পরেই ৩২ বৎসর বয়সে পাইকপাড়া গ্রামে ইহার পিতার মৃত্যু হয়। তখন ইহার মাতুলদ্বর, ঈশ্বরচন্দ্র ঘোষ ও মহেশচন্দ্র ঘোষের উপরে ইহার রক্ষা ও প্রতিপালনের ভার পড়ে। এই পারিবারিক দুর্ঘটনার চারি বৎসর পরেই র্তাহার জননীর মৃত্যু হয়। তখন পিতৃমাতৃহীন হইয়া তিনি উক্ত মাতুলদ্বয়ের স্নেহ যত্নে প্রতিপালিত হইতে থাকেন।

 তাহার মাতুলের প্রথমে বাঙ্গালী শিখিবার ਵੇ। তাহাকে গুরুমহাশয়ের পাঠশালে ভৰ্ত্তি করিয়া দেন; এবং কিছুদিন পরে ইংরাজী শিখাইযার জন্ত ঠাকুর দাস দে নামক একজন ভদ্রলোককে নিযুক্ত করেন। উত্তর কালে এই ঠাকুর দাস দে যতদিন জীবিত ছিলেন ডাক্তার সরকার তাহাকে গুরুর দ্যায় ভক্তি শ্রদ্ধা করিয়া আসিয়াছেন; এবং নিজ কার্য্যের সহায়রূপে রাখিয়াছেন।

 সরকার মহাশয়ের মাইলদিগের অবস্থা ভাল ছিল না। ইহার জ্যেষ্ঠ, মাতুল ট্রাভলিং প্ৰিণ্টারের কাজ করিতেন; তাহাঁর কনিষ্ঠ মাতুলের অবস্থাও যে খুব ভাল ছিল এরূপ মনে হয় না।

 ঠাকুর-দাস দে মহাশয়ের নিকট সামান্তরূপ ইংরাজী শিক্ষা করার পর, তাহার কনিষ্ঠ মাতুল র্তাহাকে ফ্রী বালকরূপে হেয়ারের স্কুলে ভৰ্ত্তি করিয়া দিলেন। মহামতি হেয়ার তখনও জীবিত ছিলেন। তাহার দেড় বৎসর পরে ১৮৪২ সালে ইংলোক পরিত্যাগ করেন!' মহেন্দ্রলাল ১৮৪৯ পৰ্য্যন্ত হেয়ারের স্কুলে ছিলেন। ঐ সালে তিনি “জুনিয়ার স্কলার্সিপ পরীক্ষাতে উত্তীর্ণ হইয়া হিন্দু কলেজে গমন করেন। হিন্দু কলেজে তিনি ১৮৫৪ সাল পর্যন্ত পাঠ করেন। ইতিমধ্যে র্তাহার জ্ঞানপিপাসা অতিমাত্র বৰ্দ্ধিত হইল, তিনি নানা