পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/৩৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০৬
রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ।

চলার পর কেশবচন্দ্র আইনজ্ঞ ব্যক্তিগণের মত নিৰ্দ্ধারণের জন্য, আদিসমাজের পদ্ধতি ও নিজেদের অবলম্বিত পদ্ধতি, উভয় পদ্ধতি তদানীন্তন এডভোকেট জেনারেলের হস্তে অর্পণ করিলেন। তিনি উভয় পদ্ধতিকেই আইনের চক্ষে অবৈধ বলিয়া মত প্রকাশ করিলেন। তখন আদি ব্রাহ্মসমাজের সহিত উন্নতিশীল দলের ঘোর বাক্-যুদ্ধ উপস্থিত হইল। আদি ব্রাহ্মসমাজ নবদ্বীপ, কাশী প্রভৃতি স্থানের পণ্ডিতগণের মত সংগ্রহ পূর্ব্বক দেখাইবার চেষ্টা করিতে লাগিলেন যে তাঁহাদের অবলম্বিত পদ্ধতি হিন্দুশাস্ত্রানুসারে বৈধ। কেশবচন্দ্র সেন মহাশয় ও কতিপয় লব্ধপ্রতিষ্ঠ সংস্কৃত-শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিতের মত সংগ্রহ করিয়া দেখাইলেন যে উভয় সমাজের পদ্ধতিই শাস্ত্রানুসারে অবৈধ।

 ব্রাহ্মসমাজের মধ্যেই এই মতভেদ ও বিবাদ দেখিয়া গবর্ণমেণ্ট ব্রাহ্মম্যারেজ বিল নামে যে নুতন আইন প্রণয়ন করিবার সংকল্প করিয়াছিলেন তাহা পরিত্যাগ করিলেন। ঐ নাম পরিত্যাগ করিয়া “নেটিব ম্যারেজ বিল” নামে এক নূতন আইন বিধিবদ্ধ করিবার সংকল্প করিলেন। কিন্তু হিন্দুসমজের মুখপাত্র হিন্দুপেট্রিয়ট প্রভৃতির ও দেশের অপরাপর প্রদেশের পত্রিকাদির প্রতিবন্ধকতায় সে সংকল্পও পরিত্যাগ করিতে হইল।

 ওদিকে কেশবচন্দ্র সেন মহাশয় ১৮৭১ সালে আইনটীকে নামহীন রাখিয়া পরিবর্তিত আকারে যখন বিধিবদ্ধ করিয়া লইবার জন্য ব্যগ্র হইলেন, তখন দুইটী গুরুতর প্রশ্ন উঠিল। প্রথম, এই নূতন আইনে কন্যার বিবাহোপযুক্ত বরস কত রাখা হইবে? দ্বিতীয়, এই আইন কাহাদের জন্য বিধিবদ্ধ করা হইতেছে? প্রথম প্রশ্নের মীমাংসার জন্য কেশবচন্দ্র ভারতসংস্কার সভার সভাপতিরূপে দেশের নানা প্রদেশের সুপ্রসিদ্ধ চিকিৎসকগণের মত জিজ্ঞাসা করিলেন। তাঁহাদের অধিকাংশের মতে এদেশীয় বালিকাদের বিবাহোপযুক্ত বয়স ষোড়শ বর্ষের উপরে নির্দিষ্ট হইল। কেবল কলিকাতা মেডিকেল কলেজের অন্যতম প্রোফেসার ডাক্তার চার্লস গভৃতি কেহ কেহ লিখিলেন যে চতুর্দ্দশ বর্ষকে সর্ব্বনিম্নতম বয়স মনে করা যাইতে পারে। তদনুসারে, ১৮৭২ সালের তিন আইন নামে যে আইন বিধিবদ্ধ হইল, তাহাতে চতুর্দশ বর্ষ বালিকাদিগের সর্বনিন্ম বিবাহোপযুক্ত বয়স বলিয়া নির্দিষ্ট হইল। -

 দ্বিতীয় প্রশ্নটীর মীমাংসা গবর্ণমেণ্ট এইরূপ করিলেন যে, এই নূতন আইন তাহাদেরই জন্য বিধিবদ্ধ ব্যবহৃত হইয়াছে যাহারা প্রচলিত হিন্দু, মুসলমান, খ্রীষ্টান, য়িহদী প্রভৃতি, কোনও ধর্ম্মে বিশ্বাস করে না, এবং ঐ সকল ধর্ম্মের