পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/৩৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০৮
রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ।

দল দেখা দিল; তাহার বিবরণ অগ্রেই দিয়াছি। কেশবচন্দ্র সেন মহাশয় যুবক দলের নেতৃত্ব এক প্রকার পরিত্যাগ করিয়া যোগ, ভক্তি, বৈরাগ্য প্রভৃতির সাধনার্থ কলিকাতার সন্নিকটে এক উদ্যান ক্রয় করিয়া, কতিপয় অনুগত শিষ্যসহ একান্তবাসী হইলেন; স্বপাকে আহার করিতে লাগিলেন; গেরুয়া বস্ত্র ধারণ করিতে লাগিলেন; এবং বৈরাগ্য প্রচারে রত হইলেন। ‘সমদৰ্শী' দল এই সকলের প্রতিবাদ করিয়া দুঃখ করিতে লাগিলেন, যে যুবক দলের উপর হইতে ব্রাহ্মসমাজের শক্তি চলিয়া গেল।

 কিন্তু যুবক দল সম্পূর্ণ নেতৃহীন রহিল না। দুই জন প্রতিভাশালী নেতা আসিয়া এই সময়ে বঙ্গের রঙ্গ-ভূমিতে অবতীর্ণ হইলেন। ১৮৭৪ সালে এক দিকে আনন্দমোহন বসু বিলাত হইতে ফিরিলেন; অপর দিকে সেই সময়েই বা কিঞ্চিৎ পরেই সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় কর্ম্ম হইতে অবসৃত হইয়া কলিকাতাতে আসিয়া বসিলেন। ইঁহারা উভয়েই ছাত্রদলের মধ্যে কার্য্য আরম্ভ করিলেন। হাজার হাজার যুবক ইহাদের কথা শুনিবার জন্য ছুটিতে লাগিল; এবং হাজার হাজার হৃদয়ে উন্নতির আকাঙ্খা ও স্বদেশানুরাগ প্রবল হইয়া উঠিল। যুবকদল যেন ব্রাহ্মসমাজের দিকে পিঠ ফিরিল, এবং রাজনীতি ও জাতীয় উন্নতির দিকে মুখ ফিরিল। মধ্যে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের ছাত্রসমাজ স্থাপিত হইয়া সেই গতিকে কিয়ৎপরিমাণে নিয়মিত করিয়াছিল; কিন্তু আমার মনে হয়, যুবক দলের সে ভাব এখনও সম্পূর্ণ ঘুচে নাই।

 যখন ছাত্র দল এই সকল আন্দোলনে আন্দোলিত, তখন এক মহৎ কার্য্যের সুত্রপাত হইল; তাহা ভারতসভার স্থাপন। তাহার ইতিবৃত্ত এই – বারিষ্টার মনোমোহন ঘোষ মহাশয়ের ভবন আনন্দমোহন বসু ও সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রভৃতির সম্মিলনের স্থান ছিল। সেখানে রাজনীতি বিবয়ে ইঁহাদের সর্ব্বদা কথা বার্ত্তা হইত। সকলেই অনুভব করিতে লাগিলেন যে বঙ্গদেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকদিগের জন্য রাজনীতির শিক্ষা ও আন্দালনের উপযোগী কোনও সভা নাই। কথা বার্ত্তা হইতে হইতে অবশেষে একটী রাজনৈতিক সভা স্থাপনের সংকল্প সকলের হৃদয়ে জাগিল। সেই সংকল্পের ফলস্বরূপ ১৮৭৬ সালে ভারতসভা স্থাপিত হইল। বঙ্গদেশের সামাজিক ইতিবৃত্তে সে একটা স্মরণীয় দিন। যত দূর স্মরণ হয়, সেদিন সুরেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায় মহাশয়ের একটী পুত্রের মৃত্যু হয়। তাহা সত্বেও তিনি সভাস্থলে আসিয়া