খাইয়াছিলেন এবং হাসিয়াছিলেন বলিয়া বর্জিত হইলেন। লাহিড়ী মহাশয় আমাদিগকে বর্জনের কারণ কোনও ক্রমেই বলিলেন না; কিন্তু শুনিলাম, সেই ভদ্রলোককে তাহ বলিয়াছিলেন। তিনি না কি কঁহাকে বলিয়াছিলেন—“তুমি এমনি হালকা লোক যে, যে ব্যক্তি তোমাকে বন্ধুভাবে ডাকিয়াছে, এবং তাহার জীবনের সর্বাপেক্ষা পবিত্র কাজ যাহাকে মনে করে তাহা করিতেছে, তুমি সে সময় টুকুর জন্যও গাম্ভীৰ্য্য, রাখিতে পুরিলে না! আমার ভাইবীর বিবাহে ঈশ্বরের নাম হুইবে আমি তোমাকে কিরূপে ডাকি?”
বাস্তবিক “ঈশ্বরের নাম বৃথা লইও না”—এই উপদেশ তিনি এমনি পালন করিতেন, যে যেমন তেমন অবস্থাতে ঈশ্বরের নাম শুনিতে চাহিতেন না। একবার একজন বন্ধু একজন সুগায়ককে তাহার সহিত পরিচিত করিবার জন্ত আনিলেন। লাহিড়ী মহাশয় তখন চা খাইতেছিলেন। নবাগত ব্যক্তিটা উৎকৃষ্ট ব্রহ্মসংগীত করিতে পারেন শুনিয়া তিনি অতিশয় প্রীত হইলেন। বলিলেন “আমাকে একটা গান শোনাতে হবে।” যেই এই কথা বলা, অমনি গায়ক মহাশয় গুন গুন করিয়া স্বর ভজিত্বে প্রবৃত্ত হইলেন। ইহা দেখিয়া লাহিড়ী মহাশয় একেবারে অস্থির হইয়া উঠিলেন। বলিলেন—“মহাশয়! একটু বিলম্ব করুন, আমি যে 'ভগবানের নামু শুনিবার অবস্থাতে নাই।” এই বলিয়া চার সরঞ্জামগুলি সরাইয়া লইতে আদেশ করিলেন। তৎপরে চাদরধানি পাড়িয়া গুলে দিয়া গলবস্ত্র হইয়া বলিলেন,— “এখন গান করুন”। ঈশ্বরের নামে সে ভক্তি, সে হৃদয়ের আগ্রহ কি আর দেখিব! একদিনের কথা আর ভুলিব না। সেদিন প্রত্যুষে তিনি আমাকে অনুরোধ করিলেন যে স্বৰ্য্যোদয়ের পূৰ্ব্বে সকলকে লইয় ਾਂ তগবানের নাম করিতে হইবে। তাছাই করা গেল। আমরা চক্ষু খুলিয়া দেৰি, তিনি কখন উঠিয়া দাড়াইয়াছেন; গলবস্ত্র হইয়া চাদরখানি দুই ইস্তুের মধ্যে ধরিয়া আছেন; আর খেজুর গাছের নলি দিয়া যেরূপ রস পড়ে, তেমনি সেই শ্বেতবর্ণ শ্বশ্ৰু দিয়া টপ টপ করিয়া অশ্রু ঝরিতেছে। সমুদয় মুখখানি প্রেমের জাভাতে উজ্জ্বল। আমার যেন হঠাৎ মনে হইল, ছদ ভেদ করিয়া উপরকার কোনও লোক কুইতে কোনও উন্নত জগতের একটা জীবকে নামাইয়া দিয়াছে। আমি অনিমেষ-নয়নে সেই প্রেমেজ্জল মুখের দিকে চাহিয়া রছিলাম। যেদিন সে দৃপ্ত দেখিয়াছি তাঁহা, চিরদিন স্থতুিতে থাকিবে। এমন মাহুৰ কি ঈশ্বরোপাসনার সময় তালঘু দেখিলে মার্জন করিতে পারেন?