পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/৪৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
চতুর্দশ পরিচ্ছেদ।
৩৫৯

আমার কি যাওয়া উচিত নয়?” এই বলিয়। ঐ ব্যক্তির সহৃদয়ত, ধৰ্ম্মভীরুত, কৰ্ত্তব্যপরায়ণতার নিদর্শন-স্বরূপ এক একটা গল্প করিতে লাগিলেন। একটা গল্প শেষ হয়, আর ঐ মহিলাটার প্রতি দৃষ্টিক্ষেপ করিয়া বলেন-“ঠাকুরুন ঠিক করে বলুন এতটা আপনি করতে পারতেন কি না?” অমনি ঐ মহিলাটী বিনীতবদনে বলেন—“না এতটা বোধ হয় আমা দ্বারা হতো না।” এইরূপে কয়েকট দৃষ্টান্ত দিয়া শেষে বলিলেন—“দেখুন ঠাকুরুন! আমর; মানুষের মনটাই দেখি, ভালটা দেখি না। মন মানুষেরও ভালটা দেখতে হয়। ঈশ্বর যদি আমাদের মনটাই ধরেন, তাহলে কি আমরা পার পাই?”

 এই সময়ে লাহিড়ী মহাশয়ের দিন এক প্রকার মুখেই যাইতেছিল। উন্নতিশীল ব্রাহ্মদলকে পাইয়া তিনি অতিশয় প্রীত হইয়াছিলেন; এবং তাছাদের অনেক কাৰ্য্যে যোগ দিতেছিলেন। কেবল তাহাও নয়; স্বৰ্গীয় খ্যাতনাম ডাক্তার নবীনকৃষ্ণ মিত্রের ভ্রাতা যারাসতবাসী স্বপ্রসিদ্ধ কালীকৃষ্ণ মিত্র মহাশয় তখন কলিকাতাতে বাস করিতেন। তিনি শেষ দশায় এক প্রকার চলৎশক্তি—রহিত হইয়াছিলেন। কিন্তু স্বাভাবিক সাধুতা ও বিদ্যাবত্তার গুণে তাঁহার ভবন শিক্ষিত ব্যক্তিগণের একটা প্রধান আকর্ষণের স্থান ছিল। সেখানে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, প্রসন্নকুমার সর্বাধিকারী, শু্যামাচরণ দে, তারাপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, রাধিকাপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় ও তাঁহার ভ্রাতা রাজকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়, প্রভৃতি নবরত্বের অধিষ্ঠান হইত। লাহিড়ী মহাশয় ১৮৭০ সাল হইতে মধ্যে মধ্যে সহরে আসিয়া সেই ক্ষেত্রে আরিভূত হইতেন; এবং সকলের পূজা লাভ করিতেন। প্যারীচরণ সরকায় এই নবরত্বের এক প্রধান রত্ন, ছিলেন। তিনি বহুকাল ধারাসাত স্কুলের প্রধান শিক্ষকরূপে প্রতিষ্ঠিত থাকেন। তৎপরে কলিকাতার হেয়ার স্কুলের প্রধান শিক্ষকরূপে আসিয়া শেষে প্রেসিডেন্সি কালেজের প্রোফেসারের পদে উন্নীত হইয়াছিলেন। কলিকাতাতেও তিনি বিবিধ সদনুষ্ঠানে আপনাকে নিযুক্ত করেন। প্রধানতঃ তাঁহারই উদ্যোগে কলেজেয় ছেলেদের জন্য বর্তমান ইডেন হষ্টেলের অনুরূপ একট আবাসবাটিক স্থাপিত হইয়াছিল; তিনি চোয়বাগানে একটা বালিকাবিদ্যালয় স্থাপন করেন; এডুকেশন গেজেটের সম্পাদকরূপে তিনি সকল সদনুষ্ঠানের উৎসাহ, দাতা ছিলেন; কিন্তু শিক্ষিতদলের মধ্যে স্বরাপান নিবারণের জন্ত তিনি যে চেষ্টা করিয়াছিলেন, সেই জন্যই তিনি অমুর কীৰ্ত্তি লাভ করিয়াছেন। এতদৰ্থে ১৮৬৩ সালে একটা স্বরাপান নিবারিণী সভা স্থাপনু করেন। এই সভা হইতে